পূর্ণ নাম | ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা | |||
---|---|---|---|---|
ডাকনাম | বার্সা বা ব্লাউগ্রানা (দল) কিউলিস বা বার্সেলোনিস্তাস (সমর্থক) ব্লাউগ্রানেস বা আজুলগ্রানাস (সমর্থক) | |||
প্রতিষ্ঠিত | ২৯ নভেম্বর ১৮৯৯ ফুত-বল ক্লুব বার্সেলোনা নামে | |||
মাঠ | এস্তাদি ওলিম্পিক লুইস কোম্পানিস | |||
ধারণক্ষমতা | ৫৪,৩৬৭[১] | |||
সভাপতি | জুয়ান লাপোর্তা | |||
ম্যানেজার | জাভি হার্নান্দেজ | |||
লিগ | লা লিগা | |||
২০২২–২৩ | ১ম (বিজয়ী) | |||
ওয়েবসাইট | ক্লাব ওয়েবসাইট | |||
| ||||
ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা (কাতালান: fútbol Club Barcelona; কাতালান উচ্চারণ: (ⓘ)), সাধারনভাবে বার্সেলোনা এবং বার্সা,[২] নামেও পরিচিত, একটি পেশাদার ফুটবল ক্লাব, যা স্পেনের কাতালুনিয়ার বার্সেলোনা শহরে অবস্থিত। এটি স্পেনীয় ফুটবলের শীর্ষ স্তর লা লিগায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
জোয়ান গাম্পের নামক এক ভদ্রলোকের নেতৃত্বে ১৮৯৯ সালে একদল সুইস, ইংরেজ ও কাতালান নাগরিক ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্লাবটি কাতালান সংস্কৃতির এবং কাতালুনিয়ার জাতীয়তাবাদের একটি প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে, যার মূলমন্ত্র হল “Més que un club” (একটি ক্লাবের চেয়েও বেশি)। এছাড়া ক্লাবের একটি দাপ্তরিক থিম সঙ্গীতও রয়েছে, যার শিরোনাম কান্ত দেল বার্সা(Cant del Barça), যা জাইমা পিকাস এবং ইয়োসেপ মারিয়া এস্পিনাস কর্তৃক লিখিত।[৩] অন্যান্য ফুটবল ক্লাব থেকে ভিন্ন ক্লাবটি নির্দিষ্ট কোন মালিকানা নেই, বরং সমর্থকরাই এর মালিকানা বহন করে এবং তারাই এর পরিচালক। ফোর্বস অনুযায়ী বার্সেলোনা বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবান ক্লাব, যার সম্পদের পরিমাণ ৫.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং উপার্জনের দিক থেকে এটি বিশ্বের চতুর্থ সবচেয়ে ধনী ক্লাব, যার বার্ষিক উপার্জন ৫৮২.১ মিলিয়ন ইউরো।[৪][৫]
ঘরোয়া প্রতিযোগিতা গুলোর মধ্যে বার্সেলোনা ২৭টি লা লিগা, ৩১টি কোপা দেল রে, ১৪টি স্পেনীয় সুপার কাপ, ৩টি কোপা এভা দুয়ার্তে এবং ২টি কোপা দে লা লিগা শিরোপা জিতেছে। আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনা ২২টি শিরোপা জিতেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৫টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, রেকর্ড ৪টি উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ, যৌথ রেকর্ড ৫টি উয়েফা সুপার কাপ, রেকর্ড ৩টি ইন্টার সিটিজ ফেয়ার্স কাপ, যৌথ রেকর্ড ২টি লাতিন কাপ এবং ৩টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।[৬] আইএফএফএইচএস কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব ক্লাব র্যাংকিং-এ বার্সেলোনা ১৯৯৭, ২০০৯, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালে শীর্ষস্থান অর্জন করে[৭][৮] এবং ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত উয়েফা ক্লাব র্যাংকিং এ ৯ম স্থানে অধিকার করে।[৯]
বার্সেলোনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সমর্থিত ফুটবল দল এবং প্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সমর্থক থাকা দলগুলোর মধ্যে একটি।[১০][১১] বার্সেলোনার খেলোয়াড়গন রেকর্ড সংখ্যক ব্যালন ডি’অর (১২) এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের (৭) পুরস্কার জিতেছেন। ২০১০ সালে ক্লাবটি ইতিহাস গড়ে যখন ক্লাবের যুব একাডেমী থেকে উঠে আসা তিন জন খেলোয়াড়কে (মেসি, ইনিয়েস্তা এবং জাভি) ফিফা বালোঁ দ’অর পুরস্কারের শীর্ষ তিনে মনোনীত করা হয়।
বার্সেলোনাই একমাত্র ইউরোপীয় ক্লাব, যা ১৯৫৫ সালের পর থেকে প্রতিটি মৌসুমেই মহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে এবং অ্যাথলেটিক বিলবাও ও রিয়াল মাদ্রিদের মত তাদেরও কখনও লা লিগা থেকে অবনমন ঘটেনি। ২০০৯ সালে বার্সেলোনা প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয় করে (লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ)। ঐ একই বছর তারা বিশ্বের প্রথম ফুটবল ক্লাব হিসেবে এক বছরে ছয়টি শিরোপার সবকয়টি জিতে সেক্সটাপল সম্পন্ন করে। সে বছর তারা পূর্বে উল্লেখিত ট্রেবলসহ স্পেনীয় সুপার কোপা, উয়েফা সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে।[১২] ২০১১ সালে বার্সেলোনা পুনরায় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতে এবং সে বছর তারা মোট ৫টি শিরোপা জিতে, শুধুমাত্র কোপা দেল রে শিরোপা তাদের হাতছাড়া হয়। পেপ গার্দিওলার অধীন বার্সেলোনা দলকে, যেটি ৪ বছরে ১৪টি শিরোপা জয় করতে সক্ষম হয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবল দল মনে করা হয়।[১৩][১৪][১৫][১৬] ২০১৫ সালের ৬ জুন, চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে বার্সেলোনা দুইবার ট্রেবল জেতার রেকর্ড গড়ে।
১৮৯৯ সালের ২২ অক্টোবর জোয়ান গাম্পের ‘‘লস দেপোর্তেস’’ পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন; ২৯ নভেম্বর জিমনাসিও সোলে একটি সম্মেলনে তিনি ইতিবাচক সাড়া পান। সম্মেলনে এগারো জন খেলোয়াড় উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন: গুয়ালতেরি ওয়াইল্ড, লুইস দে ওসো, বার্তোমেউ তেরাদাস, অটো কুঞ্জলে, অটো মায়ের, এনরিক ডুক্যাল, পেরে ক্যাবত, জোসেপ লোবেত, জন পার্সনস এবং উইলিয়াম পার্সনস। এভাবে জন্ম নেয় ফুট-বল ক্লাব বার্সেলোনা (Foot-Ball Club Barcelona)।
আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সফলভাবেই শুরু করে বার্সেলোনা। ১৯০২ সালে তারা ‘‘কোপা মাকায়া’’ শিরোপা জিতে, যা ছিল তাদের প্রথম শিরোপা। ঐ বছর তারা কোপা দেল রে প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহন করে এবং ফাইনালে ক্লাব ভিজকায়ার (অ্যাথলেটিক বিলবাও) বিপক্ষে ১–২ ব্যবধানে পরাজিত হয়।[১৭]
১৯০৮ সালে জোয়ান গাম্পেরকে ক্লাবের সভাপতি করা হয়। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ১৯০৫ সালের পর থেকে আর কোন শিরোপা জিততে পারছিলনা বার্সেলোনা। গাম্পের মোট ২৫ বছর ক্লাবের পরিচালক হিসেবে ছিলেন। তার সময়ের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে ছিল বার্সেলোনার নিজস্ব স্টেডিয়াম। এতে করে, বার্সেলোনা একটি প্রতিষ্ঠিত আয়ের উত্স পেয়ে যায়।[১৮]
১৯০৯ সালের ১৪ মার্চ বার্সেলোনা ‘‘কাম্প দে লা ইন্দাস্ত্রিয়া’’ স্টেডিয়ামে চলে আসে, যার ধারণ ক্ষমতা ছিল ৮,০০০। ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনা পাইরেনিস কাপে অংশগ্রহণ করে। ঐ প্রতিযোগিতায় সে সময়ের সেরা দলগুলো অংশগ্রহন করত এবং এটি ছিল সে সময়ের সবচেয়ে সুন্দর প্রতিযোগিতা।[১৯]
১৯২২ সালে বার্সেলোনা কাম্প দে লেস কোর্তস্ স্টেডিয়ামে চলে আসে। কাম্প দে লেস কোর্তস্-এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ২২,০০০। পরবর্তীতে এর ধারণ ক্ষমতা ৬০,০০০-এ উন্নীত করা হয়।[২০] জ্যাক গ্রিনওয়েল ছিলেন ক্লাবের প্রথম ফুল-টাইম ম্যানেজার। গাম্পের যুগে বার্সেলোনা ১১টি কাতালান কাপ, ৬টি কোপা দেল রে এবং ৪টি পাইরেনিস কাপ শিরোপা জিতে।[১৭][১৮]
১৯২৫ সালের ১৪ জুন, স্টেডিয়ামের দর্শকগন স্পেনের জাতীয় সঙ্গীতের ব্যঙ্গ করে এবং ‘‘God Save The King’’ সঙ্গীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে মিগুয়েল প্রিমো দে রিভেরার একনায়কতন্ত্রের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে, স্টেডিয়ামটিকে প্রতিহিংসামূলকভাবে ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং গাম্পারকে পরিচালকের পদ হতে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।[২১] ১৯২৬ সালে, ক্লাবের পরিচালনা পরিষদ ক্লাবটিকে প্রথমবারের মত পেশাদার ক্লাব হিসেবে ঘোষণা করে।[২২]
১৯২৮ সালে বার্সেলোনা কোপা দেল রে শিরোপা জিতে। ‘‘Oda a Platko’’ নামক একটি কবিতা আবৃতি করার মাধ্যমে তারা এই জয় উত্যাপন করে। কবিতাটি লিখেছিলেন রাফায়েল অ্যালবার্তি, যিনি বার্সেলোনার গোলরক্ষকের দূর্দান্ত নৈপূন্যে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।[২৩] ব্যক্তিগত ও আর্থিক সমস্যার কারণে জোয়ান গাম্পের বিষন্ন হয়ে পড়েন। ১৯৩০ সালের ৩০ জুলাই, তিনি আত্মহত্যা করেন।[১৮]
খেলাধুলার উপর রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে শুরু করলেও ক্লাবটি ১৯৩০, ১৯৩১, ১৯৩২, ১৯৩৪, ১৯৩৬ ও ১৯৩৮ সালে কাতালান কাপ জিতে।[১৭] ১৯৩৬ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পর বার্সেলোনা ও অ্যাথলেটিক বিলবাও-এর কয়েকজন খেলোয়াড়কে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে তালিকাভুক্ত করা হয়। ৬ আগস্ট, ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ সানিওলকে হত্যা করে স্পেনের রাজনৈতিক দল ফালাঞ্জের সেনারা। ইয়োসেপ সানিওল ছিলেন কাতালানদের স্বাধীনতার স্বপক্ষে।
১৯৩৭ সালের গ্রীষ্মে, বার্সেলোনা মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। এই সফর ক্লাবটিকে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ১৯৩৮ সালের ১৬ মার্চ, বার্সেলোনাতে বিমান হামলা চালানো হয়। এতে তিন হাজারেরও বেশি প্রাণহানি ঘটে। এমনকি একটি বোমা ক্লাবের অফিসেও আঘাত হানে। কয়েক মাস পর, কাতালোনিয়া দখলদারিত্বের অধীনে আসে। গৃহযুদ্ধ শেষে কাতালান পতাকা বাতিল করে দেওয়া হয় এবং ক্লাবগুলোর অ-স্পেনীয় নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘‘ক্লাব দে ফুটবল বার্সেলোনা’’ এবং তাদেরকে কাতালান পতাকাও সড়িয়ে ফেলতে হয়।[২০]
১৯৪৩ সালে, কোপা দেল রে-এর সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা। প্রথম লেগের খেলায় লেস কোর্তস্ স্টেডিয়ামে বার্সেলোনা ৩–০ ব্যবধানে জয় লাভ করে। অভিযোগ করা হয় দ্বিতীয় লেগে স্পেনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রধান বার্সেলোনার ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করেন এবং স্থানীয় সাংবাদিক পাকো আগুইলার এবং খেলোয়াড়দের হুমকি দেন। তিনি খেলোয়াড়দেরকে মনে করিয়ে দেন যে তারা শুধুমাত্র শাসকদের উদারতার কারণে খেলতে পারছেন। যদিও তা কখনো প্রমাণিত হয়নি। খেলায় রিয়াল মাদ্রিদ ১১–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।[২৪] রাজনৈতিক দূরবস্থা সত্বেও, ১৯৪০ ও ১৯৫০ এর দশকে বার্সেলোনা তাদের সফলতার ধারা বজায় রাখে। ১৯৪৫ সালে, ইয়োসেপ সামিতেরের মত ম্যানেজার এবং সিজার রামালেতস ও ভালেস্কোর মত খেলোয়াড়দের নিয়ে বার্সেলোনা লা লিগা শিরোপা জিতে। ১৯২৯ সালের পর এটিই ছিল তাদের প্রথম লা লিগা শিরোপা। ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালেও তারা লা লিগা শিরোপা জিতে। ঐ বছর তারা কোপা লাতিনা শিরোপাও জিতে। ১৯৫০ সালের জুনে, বার্সেলোনা লাদিসলাও কুবালার সাথে চুক্তি করে।
১৯৫১ সালে একটি বৃষ্টিবহুল রবিবারে, সান্তেনদারের বিপক্ষে খেলায় বার্সেলোনা ২–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। খেলা শেষে লেস কোর্তস্ স্টেডিয়ামের দর্শকগন কোন ট্রামগাড়ী না নিয়ে পায়ে হেঁটে রওনা দেয়। যা ফ্রাংকো কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল বিস্ময়কর। বার্সেলোনায় একটি ট্রাম ধর্মঘট সংঘটিত হয়, যা বার্সেলোনা সমর্থকদের সমর্থন পেয়েছিল। এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা ক্লাবটিকে কাতালোনিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত করে তোলে। অনেক প্রগতিশীল স্পেনীয় নাগরিক ক্লাবটিকে অধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষাকারী হিসেবে দেখতে থাকেন।
ম্যানেজার ফেদ্রিনান্দ ডওচিক ও কুবালা ১৯৫২ সালে দলটিকে পাঁচটি আলাদা শিরোপা এনে দেন। এর মধ্যে ছিল, লা লিগা, কোপা দেল জেনেরালিসিমো (কোপা দেল রে), কোপা লাতিনা, কোপা এভা দুয়ার্তে এবং কোপা মার্তিনি রোসি। ১৯৫৩ সালে, বার্সেলোনা আবারও লা লিগা ও কোপা দেল জেনেরালিসিমো জিতে।[২০]
১৯৫৯ সালে বার্সেলোনা জাতীয় পর্যায়ে ডাবল শিরোপা জিতে। ১৯৬০ সালে লা লিগা ও ইন্টার সিটিজ ফেয়ার্স কাপ নিয়ে আবারও ডাবল শিরোপা জিতে বার্সেলোনা। ১৯৬১ সালে ইউরোপীয়ান কাপে (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) প্রথম দল হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর কৃতিত্ব অর্জন করে বার্সেলোনা। কিন্তু বেনফিকার কাছে ফাইনালে ৩–২ ব্যবধানে হেরে যায় তারা।[২৫][২৬][২৭]
১৯৬০ এর দশকে বার্সেলোনা খুব বেশি সফলতা পায়নি। এ সময় লা লিগায় একচেটিয়াভাবে রাজত্ব করে রিয়াল মাদ্রিদ। ক্যাম্প ন্যু-এর নির্মাণ কাজ ১৯৫৭ সালে শেষ হয়, ফলে খেলোয়াড়দের পেছনে ব্যয় করার জন্য কিছু পরিমান টাকা ক্লাবটির কাছে ছিল।[২৭] ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্য ছিল, ঐ দশকে ইয়োসেপ মারিয়া ফুস্তে ও চার্লস রেক্সাসের মত খেলোয়াড়দের উদ্ভব ঘটে এবং বার্সেলোনা ১৯৬৩ সালে কোপা দেল জেনেরালিসিমো ও ১৯৬৬ সালে ফেয়ার্স কাপ জিতে। ১৯৬৮ সালে এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদকে কোপা জেনেরালিসিমোর ফাইনালে ০–১ ব্যবধানে হারিয়ে বার্সেলোনা তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পায়। ১৯৭৪ সালে ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটলে বার্সেলোনা ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে পুনরায় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা রাখা হয়। ক্লাবের প্রতীকটিও পরিবর্তন করা হয় এবং তাতে প্রকৃত বর্ণগুলো ফিরিয়ে আনা হয়।[২৮]
১৯৭৩–৭৪ মৌসুমে বার্সেলোনায় যোগ দেন ইয়োহান ক্রুইফ। তাকে ডাচ ক্লাব এএফসি আয়াক্স হতে ৯২০,০০০ ইউরোর বিনিময়ে ক্রয় করে বার্সেলোনা। তিনি নেদারল্যান্ডসের একজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি ইউরোপীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন যে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে বার্সেলোনাকে বেশি পছন্দ করেন কারণ তিনি এমন কোন ক্লাবে খেলতে চান না যেখানে ফ্রাংকো সহযোগীতা করে। এই কথার মাধ্যমে ক্রুইফ খুব দ্রুতই বার্সেলোনা সমর্থকদের মন জয় করে ফেলেন। সমর্থকদের কাছে তিনি আরও পছন্দের একজন হয়ে ওঠেন, যখন তিনি তার ছেলের নাম হিসেবে কাতালান নাম ‘‘জর্দি’’ ব্যবহার করেন (ইয়োহান জর্দি ক্রুইফ)।
জোয়ান ম্যানুয়েল আসেন্সি, চার্লস রেক্সাস ও হুগো সতিলের মত দক্ষ খেলোয়াড়দের নিয়ে ১৯৭৩–৭৪ মৌসুমে তিনি দলকে লা লিগা শিরোপা এনে দেন। ১৯৬০ সালের পর এটিই ছিল বার্সেলোনার প্রথম লা লিগা শিরোপা।[১৭] তারা সান্তিয়াগো বের্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫–০ ব্যবধানে হারায়।[২৯] ১৯৭৩ সালে ক্রুইফকে ইউরোপীয় বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হয়। এটি ছিল তার দ্বিতীয় বালোঁ দ’অর, প্রথমটি তিনি ১৯৭১ সালে আয়াক্সে খেলার সময় জিতেছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি তৃতীয়বারের মত বালোঁ দ’অর জিতেন। ঐ সময় তিনি তিনটি বালোঁ দ’অর জেতা একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন।[৩০]
১৯৭৮ সালে ক্লাবের সদস্যদের দ্বারা ক্লাব প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইয়োসেপ লুইস নুনিয়েজ। নুনিয়েজের প্রধান লক্ষ্য ছিল বার্সেলোনাকে মাঠ ও মাঠের বাহিরে একটি বিশ্বমানের ক্লাবে পরিণত করা।তার ২২ বছরের সভাপতিত্বকালে তিনি বেতন ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কঠোর ছিলেন।তিনি দাবি না মেনে দিয়েগো ম্যারাডোনা, রোমারিও, রোনালদো র মতো খেলোয়াড়দের বিক্রি করে দিয়েছেন।[৩১][৩২] ১৯৭৯ সালের ২০ অক্টোবর, ইয়োহান ক্রুইফের অনুরোধে বার্সেলোনার যুব একাডেমী লা মাসিয়া চালু করেন নুনিয়েজ।[৩৩] তিনি ২২ বছর যাবত্ বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ সময় তিনি বেতন ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কঠোর নীতি অবলম্বন করেন।[৩৪][৩৫]
১৯৭৯ সালের ১৬ মে, ফরচুনা ডুসেলডোর্ফকে ৪–৩ ব্যবধানে হারিয়ে বার্সেলোনা প্রথমবারের মত কাপ উইনার্স কাপ জিতে। বাসেলে অনুষ্ঠিত ঐ ফাইনাল খেলাটি গ্যালারিতে বসে ৩০,০০০ এরও বেশি ব্লাউগ্রানা সমর্থক উপভোগ করেন। ১৯৮২ সালের জুনে, দিয়েগো মারাদোনাকে বোকা জুনিয়র্স থেকে রেকর্ড ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয় বার্সেলোনা।
পরের মৌসুমে ম্যানেজার সিজার লুইস মেনোত্তির অধীনে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে শিরোপা জিতে বার্সেলোনা। বার্সেলোনাতে মারাদোনা বেশি দিন ছিলেন না। তিনি বার্সা ছেড়ে নাপোলিতে চলে যান। ১৯৮৪–৮৫ মৌসুমে টেরি ভেনাবল্সকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার অধীনে বার্সেলোনা লা লিগা শিরোপা জিতে। পরের মৌসুমে ভেনাবল্সের অধীনে বার্সেলোনা দ্বিতীয়বারের মত ইউরোপীয়ান কাপের (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে স্তেউয়া বুকুরেস্তির বিপক্ষে নাটকীয়ভাবে পেনাল্টিতে হেরে যায় বার্সেলোনা।[৩১]
১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপের পর প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যারি লিনেকার এবং গোলরক্ষক আন্দোনি জুবিজারেতাকে দলে ভিড়ানো হয়। এরপরও সফলতার দেখা পায়নি বার্সেলোনা। ১৯৮৭–৮৮ মৌসুমের শুরুর দিকে ভেনাবল্সকে বহিষ্কার করে লুইস আরাগোনসকে দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। খেলোয়াড়রা প্রেসিডন্ট নুনিয়েজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। কোপা দের রে’র ফাইনালে রিয়াল সোসিয়েদাদকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে মৌসুম শেষ করে বার্সেলোনা।[৩১]
১৯৮৮ সালে ইয়োহান ক্রুইফ ম্যানেজার হিসেবে দলে ফিরে আসেন। তিনি পেপ গার্দিওলা, হোসে মারি বাকেরো, জিকি বেগিরিস্তেইনের মত স্পেনীয় খেলোয়াড়দের এবং রোনাল্দ কোয়ম্যান), মাইকেল লওড্রাপ এবং রোমারিওর মত আন্তর্জাতিক তারকাদের একত্রিত করেন।[৩৬] তার অধীনে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত টানা চার মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগা শিরোপা জিতে। তারা ১৯৮৯ সালে কাপ উইনার্স কাপের ফাইনালে এবং ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় কাপের (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) ফাইনালে স্যাম্পদোরিয়াকে হারায়। এছাড়া তারা, ১৯৯০ সালে কোপা দেল রে, ১৯৯২ সালে ইউরোপীয়ান সুপার কাপ এবং তিনটি স্পেনীয় সুপার কোপা জিতে। ২০১১ সালে গার্দিওলার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত মোট ১১টি শিরোপা নিয়ে ইয়োহান ক্রুইফ বার্সেলোনার সবচেয়ে সফল ম্যানেজার ছিলেন।[৩৭] তিনি টানা আট বছর বার্সেলোনার ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন।[৩৮] ক্রুইফের শেষ দুই মৌসুমে বার্সেলোনা কোন শিরোপার দেখা পায়নি। ফলে ম্যানেজারের দায়িত্ব থেকে ক্রুইফ সরে দাড়ান।[৩১]
ইয়োহান ক্রুইফের প্রস্থানের পর দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়া হয় ববি রবসনকে। তিনি শুধুমাত্র ১৯৯৬–৯৭ মৌসুমেই ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বার্সেলোনা চুক্তি করে রোনালদোর সাথে। কোপা দেল রে, উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ এবং স্পেনীয় সুপার কোপা জেতার মাধ্যমে মৌসুম শেষ করে বার্সেলোনা। পরের মৌসুমে বার্সেলোনার ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন লুইস ফন গাল।[৩৯] ১৯৯৮ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপ শিরোপা জিতে বার্সেলোনা। এছাড়া তারা কোপা দেল রে এবং লা লিগা শিরোপাও জিতে। ১৯৯৯ সালে রিভালদোকে ইউরোপীয় বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দেওয়া হয়। এতে করে তিনি বার্সেলোনার চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরস্কার জেতার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ঘরোয়া লিগে সাফল্য পেলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বারবার ব্যর্থ হওয়ার কারণে ২০০০ সালে ফন গাল এবং নুনেজ পদত্যাগ করেন।[৩৯]
২০০০ সালে, নুনিয়েজের প্রস্থানের পর বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন জোয়ান গাসপার্ত। তিনি তিন বছর এই দায়িত্বে ছিলেন। এসময়ে বার্সেলোনায় তিনবার ম্যানেজার পরিবর্তিত হয়। ২০০১ সালের এপ্রিলে, দ্বিতীয়বারের মত দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন ফন গাল, কিন্তু ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে, তিনি এবং প্রেসিডেন্ট গাসপার্ত পদত্যাগ করেন।[৪০]
একটি হতাশাজনক অধ্যায় শেষে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন জোয়ান লাপোর্তা এবং ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রাক্তন ওলন্দাজ খেলোয়াড় ফ্রাংক রাইকার্ড। আন্তর্জাতিক তারকা খেলোয়াড় এবং স্থানীয় খেলোয়াড়দের সংমিশ্রনে গড়া দল নিয়ে পুনরায় সাফল্য পেতে শুরু করে বার্সেলোনা। ২০০৪–০৫ মৌসুমে তারা লা লিগা ও স্পেনীয় সুপার কোপা জিতে এবং দলের মাঝমাঠের খেলোয়াড় রোনালদিনিয়ো জিতেন ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।[৪১]
২০০৫–০৬ মৌসুমে বার্সেলোনা আবারও লা লিগা এবং স্পেনীয় সুপার কোপা শিরোপা জিতে।[৪২] ২০০৬ সালের ১৭ মে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আর্সেনালকে ২–১ ব্যবধানে হারায় বার্সেলোনা। খেলায় তারা ০–১ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু খেলার শেষ ১৫ মিনিটে দুটি গোল করেন ইতো এবং বেলেত্তি। বিগত ১৪ বছরে এটিই ছিল বার্সেলোনার প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।[৪৩]
দূর্দান্তভাবে শুরু করা সত্ত্বেও, ২০০৬–০৭ মৌসুমে বার্সেলোনা শুধুমাত্র স্পেনীয় সুপার কোপা শিরোপা জিতে। ২০০৬ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করলেও ব্রাজিলীয় ক্লাব ইন্টারনাসিওনালের বিপক্ষে তারা পরাজিত হয়।[৪৪] শিরোপা ঘাটতি হিসেবে প্রাক মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং রাইকার্ড ও ইতোর মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্বকেই দোষারোপ করা হয়।[৪৫][৪৬] লা লিগায় মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই বার্সা প্রথম স্থানে ছিল, কিন্তু নতুন বছরে তাদের পরিবর্তনশীলতার কারণে রিয়াল মাদ্রিদ তাদেরকে টপকে যায়। মৌসুম শেষে বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট সমান হলেও মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার কারণে শিরোপা জিতে মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ওয়েডার ব্রেমেনকে ২–০ ব্যবধানে হারিয়ে কোনক্রমে গ্রুপ পর্ব টপকাতে সমর্থ হয় বার্সলোনা, কিন্তু রাউন্ড ১৬-তে লিভারপুলের বিপক্ষ হেরে তাদেরকে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয়।
বার্সেলোনার ২০০৭–০৮ মৌসুম কোন প্রকার শিরোপা ছাড়াই শেষ হয়। তারা তৃতীয় স্থানে থেকে লা লিগা শেষ করে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয়।
২০০৮ সালের জুনে, ফ্রাংক রাইকার্ডের স্থলাভিষিক্ত হন বার্সেলোনা বি দলের ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা।[৪৭] তিনি দলকে টিকি-টাকা কৌশলে খেলানো শুরু করেন, রোনালদিনিয়ো এবং ডেকোকে বিক্রয় করে জাভি, ইনিয়েস্তা এবং মেসিদের নিয়ে দল গড়তে শুরু করেন।
২০০৯ কোপা দেল রে’র ফাইনালে, অ্যাথলেটিক বিলবাওকে ৪–১ ব্যবধানে হারিয়ে ২৫তম বারের মত এই শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা। এর তিন দিন পরেই তারা রিয়াল মাদ্রিদকে ৬–২ ব্যবধানে হারায় এবং লা লিগা শিরোপা জিতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২–০ ব্যবধানে হারিয়ে তারা ২০০৮–০৯ মৌসুমে ট্রেবল শিরোপা জিতে। এটিই ছিল কোন স্পেনীয় ক্লাবের প্রথম ট্রেবল জয়।[৪৮][৪৯][৫০] এছাড়া তারা অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারিয়ে ২০০৯ স্পেনীয় সুপার কোপা[৫১] এবং সাখতার দোনেত্স্ককে হারিয়ে ২০০৯ উয়েফা সুপার কাপ শিরোপাও জিতে।[৫২] ডিসেম্বরে, আর্জেন্টাইন ক্লাব এস্তুদিয়ান্তেসকে হারিয়ে তারা ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে[৫৩] এবং এক পঞ্জিকাবর্ষে সাম্ভব্য ছয়টি শিরোপারি লিওনেল মেসি, সর্বকালের সবকয়টি জেতার রেকর্ড গড়ে।[৫৪] ২০১০ সালে, স্পেনীয় ফুটবলে বার্সেলোনা দুইটি নতুন রেকর্ড গড়ে। তারা ৯৯ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগা শিরোপা এবং তাদের নবম স্পেনীয় সুপার কোপা শিরোপা জিতে।[৫৫][৫৬]
২০১০ সালের জুনে, জোয়ান লাপোর্তার প্রস্থানের পর সান্দ্রো রসেলকে ক্লাব প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এই নির্বাচন সংঘটিত হয় ১৩ জুন। নির্বাচনে তিনি মোট ভোটের ৬১.৩৫% পেয়ে নির্বাচিত হন।[৫৭] রসেল ভালেনসিয়া থেকে ডেভিড ভিয়াকে ৪০ মিলিয়ন ইউরো[৫৮] এবং লিভারপুল থেকে হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোকে ১৯ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ক্রয় করেন।[৫৯] ২০১০ সালের নভেম্বরে, বার্সেলোনা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে ৫–০ ব্যবধানে হারায়। ২০১০–১১ মৌসুমে ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনা টানা তৃতীয়বারের মত লা লিগা শিরোপা জিতে।[৬০] ২০১১ সালের এপ্রিলে, কোপা দেল রে’র ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ১–০ ব্যবধানে হেরে যায় তারা।[৬১] ২০১১ সালের ২৮ মে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৩–১ ব্যবধানে হারায় বার্সেলোনা। এটি ছিল তাদের চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।[৬২] ২০১১ সালের আগস্টে, লা মাসিয়া উদ্ভাবিত সেস্ ফ্যাব্রিগাসকে আর্সেনাল থেকে কিনে নেয় বার্সেলোনা, যিনি বার্সেলোনাকে স্পেনীয় সুপার কোপা জেতাতে সহায়তা করেন। এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনার মোট শিরোপা সংখ্যা দাড়ায় ৭৩-এ।[৬৩]
২৬ আগস্ট, উয়েফা সুপার কাপে পোর্তোকে ২–০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতে বার্সেলোনা। গোল দুইটি করেন লিওনেল মেসি এবং সেস্ ফ্যাব্রিগাস। এতে করে শিরোপা জয়ের দৌড়ে রিয়াল মাদ্রিদকে টপকে বার্সেলোনার মোট শিরোপা সংখ্যা দাড়ায় ৭৪-এ। এটি ছিল বার্সেলোনার ম্যানেজার হিসেবে পেপ গার্দিওলার ১৫তম শিরোপা। যা ছিল বার্সেলোনার একজন ম্যানেজারের সর্বোচ্চ শিরোপা জেতার রেকর্ড।[৬৪]
২০১১ সালের ডিসেম্বরে, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ব্রাজিলীয় ক্লাব স্যান্তোসকে ৪–০ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এই শিরোপা জিতে বার্সেলোনা। খেলায় লিওনেল মেসি দুইটি এবং জাভি ও ফ্যাব্রিগাস একটি করে গোল করেন।[৬৫] এতে করে গার্দিওলা যুগে বার্সেলোনার মোট শিরোপা সংখ্যা দাড়ায় ১৩।
বার্সেলোনার ২০১১–১২ মৌসুম শেষ হয় লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ছাড়াই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে চেলসির কাছে ১–০ ব্যবধানে হেরে যায় বার্সেলোনা। লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১–২ ব্যবধানে পরাজিত হয় বার্সা। যা ঘরোয়া লিগের শিরোপা মোটামুটিভাবে নির্ধারন করে ফেলে।[৬৬] চেলসির বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনা ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও খেলাটি শেষ হয় ২–২ সমতায়। খেলায় মেসি একটি গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি মিস করেন। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩–২ ব্যবধানে প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌছায় চেলসি।
এর কিছুদিন পরেই কোচ গার্দিওলা ঘোষণা করেন যে তিনি বার্সেলোনার সাথে চুক্তি নবায়ন করবেন না। ৩০ জুন তিনি কোচের পদ থেকে সরে দাড়াবেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হবেন সহকারী কোচ টিটো ভিলানোভা।[৬৭][৬৮] কোপা দেল রে’র ফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে ৩–০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জেতার মাধ্যমে বার্সেলোনায় তার কার্যকালের ইতি টানেন গার্দিওলা। তার অধীনে বার্সেলোনা মোট ১৪টি শিরোপা জিতে।
গার্দিওলার শিরোপাময় চারটি বছরে অনুপ্রানিত হয়ে ব্রিটিশ পরিচালক পল গ্রীনগ্র্যাস কাতালান জায়ান্টদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই তথ্যচিত্রের শিরোনাম দেওয়া হয় ‘‘বার্সা (Barça)’’। ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের পূর্বে এর কাজ সম্পন্ন হবে।[৬৯]
২০১২ সালের গ্রীষ্মে, বার্সেলোনা ঘোষণা করে যে সহকারী ম্যানেজার টিটো ভিলানোভা, পেপ গার্দিওলার স্থলাভিষিক্ত হবেন। টিটোর দায়িত্ব গ্রহণের পর স্পেনীয় সুপার কাপে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পরাজিত হলেও, দূর্দান্তভাবে মৌসুম করে বার্সেলোনা। মৌসুমের পুরোটা সময় লিগ টেবিলের শীর্ষে ছিল তারা। মাত্র ২টি পরাজয় নিয়ে লিগে তারা ১০০ পয়েন্ট অর্জন করে। এবারও দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন লিওনেল মেসি। লিগে তিনি করেন ৪৬ গোল, সাথে ছিল ২টি হ্যাট্রিক। ২০১৩ সালের ১১ মে, বার্সেলোনা তাদের ২২তম লিগ শিরোপা জিতে। তখনও লিগের আরও চারটি খেলা অবশিষ্ট ছিল। শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে লিগ শেষ করে, যদিও মার্চের শুরুতে তারা রিয়ালের বিপক্ষে ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়।[৭০] তারা কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ উভয় প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে পৌছায়। সেখানে তারা যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হয়। উভয়ের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে তারা প্রতিযোগিতা দুইটি থেকে বিদায় নেয়। ১৯ জুলাই, ঘোষণা করা হয় যে টিটো ভিলানোভা গলার ক্যান্সারের কারণে দলের ম্যানেজারের পদ থেকে অব্যাহতি নেবেন এবং পুনরায় চিকিত্সা গ্রহণ করবেন।[৭১][৭২][৭৩]
২০১৩ সালের ২২ জুলাই, হেরার্দো 'টাটা' মার্তিনোকে ২০১৩-১৪ মৌসুমের জন্য বার্সেলোনার ম্যানেজার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়[৭৪] মার্তিনোর অধীনে বার্সার প্রথম দুইটি খেলা ছিল ২০১৩ স্পেনীয় সুপার কাপের প্রথম ও দ্বিতীয় লেগ, যা বার্সা এওয়ে গোলে জিতে। ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারী, নেইমারের স্থানান্তর সম্পর্কে অভিযোগ ওঠায় বার্সেলোনার প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দেন সান্দ্রো রোসেল। তার স্থলাভিষিক্ত হন ইয়োসেপ মারিয়া বার্তোমেউ, যিনি ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল, ফিফা ক্লাবটিকে পরবর্তী দুই মৌসুমের ট্র্যান্সফার উইন্ডোতে কোন প্রকার খেলোয়াড় কেনা থেকে নিষিদ্ধ করে। কারণ হিসেবে বলা হয় ক্লাবটি ১৮ বছরের কম বয়সী খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে ফিফার খেলোয়াড় স্থানান্তর সম্পর্কিত আইন ভঙ্গ করেছে।[৭৫] বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ ফিফার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে।[৭৬] ২৩ এপ্রিল, ফিফা বার্সেলোনার উপর তাদের আরোপিত নিশেধাজ্ঞা মূলতবি করে।[৭৭][৭৮] ২০ আগাস্ট, ২০১৪ ফিফা বার্সেলোনার করা আপিল খারিজ করে দেয়।
১৭ মে, লা লিগার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আতলেতিকো মাদ্রিদের (যাদের কাছে পরাজিত হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে) বিপক্ষে খেলায় জয় আবশ্যক ছিল বার্সেলোনার। কিন্তু খেলাটি ড্র হয়, যার ফলাফলস্বরূপ চ্যাম্পিয়ন হয় আতলেতিকো মাদ্রিদ।[৭৯]
২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগা, কোপা দেল রে এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের মাধ্যমে ট্রেবল জয় সম্পন্ন করে এবং প্রথম ইউরোপীয় ক্লাব হিসেবে দুইবার ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করে।[৮০] ১৭ মে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারানোর মাধ্যমে বার্সেলোনা তাদের ২৩তম লিগ শিরোপা জয় করে।[৮১] এটি ছিল বিগত ১০ বছরে বার্সেলোনার ৭ম লা লিগা জয়।[৮২] ৩০ মে ফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারিয়ে বার্সেলোনা ২০১৪-১৫ কোপা দেল রে জয় করে।[৮৩] ৬ জুন বার্সেলোনা ২০১৪-১৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইয়ুভেন্তুসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় ট্রেবল জয় সম্পন্ন করে।[৮৪] বার্সেলোনার আক্রমণভাগের ত্রিফলা মেসি, সুয়ারেজ এবং নেইমার, যারা "এমএসএন" নামে পরিচিত ছিল, এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১২২ গোল করে যা স্পেনীয় ফুটবলের ইতিহাসে কোন দলের আক্রমণভাগের তিন খেলোয়াড় কর্তৃক সর্বোচ্চ গোল।[৮৫]
১১ অগাস্ট ২০১৫ বার্সেলোনা তাদের নতুন মৌসুম শুরু করে সেভিয়াকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে যুগ্ম রেকর্ড পঞ্চম বারের মত উয়েফা সুপার কাপ জয়ের মধ্য দিয়ে। তারা বছর শেষ করে আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড তৃতীয় বারের মত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে। সুয়ারেজ, মেসি এবং ইনিয়েস্তা এই টুর্নামেন্টের সেরা তিন খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।[৮৬] এই ক্লাব বিশ্বকাপ ছিল বার্সেলোনার ২০তম আন্তর্জাতিক শিরোপা, যা একটি যুগ্ম রেকর্ড, যেখানে অন্য ক্লাবটি হচ্ছে মিশরের আল আহলি।[৮৭][৮৮] ২০১৫ সালে ১৮০টি গোল করার মধ্য দিয়ে বার্সেলোনা এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়ে যা ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের গড়া ১৭৮ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেয়।[৮৯]
২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শেষ ৮ বছরে ৬ষ্ঠ কোপা দেল রে ফাইনালে ওঠার মাধ্যমে লুইস এনরিকের বার্সেলোনা সর্বোচ্চ ২৮ ম্যাচ টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দেয় যা ২০১০-১১ মৌসুমে পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনা গড়েছিল।[৯০][৯১] ৩ মার্চ রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে ৫-১ গোলে জয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনা টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার স্পেনীয় রেকর্ড গড়ে যা রিয়াল মাদ্রিদের ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে গড়া ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার স্পেনীয় রেকর্ড ভেঙে দেয়।[৯২][৯৩] ২ এপ্রিল ২০১৬ ক্যাম্প ন্যু তে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ২-১ গোলের হার দিয়ে বার্সেলোনার টানা ৩৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার দৌড় শেষ হয়।[৯৪] ১৪ মে ২০১৬ বার্সেলোনা শেষ ৮ মৌসুমে ৬ষ্ঠ লা লিগা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করে।[৯৫]
২০১৭ সালের ৮ মার্চ বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কামব্যাকের ইতিহাস রচনা করে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ২য় রাউন্ডের ম্যাচের প্রথম লেগে বার্সেলোনা ফরাসি ক্লাব পারি সাঁ-জেরমাঁর কাছে ৪-০ গোলে হেরে বসে। কিন্তু ২য় লেগে বার্সেলোনা পারি সাঁ-জেরমাঁকে ৬-১ গোলে হারিয়ে ৬-৫ গোলের মোট হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে পদার্পণ করে।[৯৬]
২০১৭ সালের ২৯ মে বার্সেলোনা তাদের প্রাক্তন খেলোয়াড় এর্নেস্তো ভালভেরদেকে দুই বছরের চুক্তিতে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়।[৯৭]
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বার্সেলোনা ২০১৭ সালের স্বাধীনতার দাবিতে কাতালান গণভোট এর বিষয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে যাতে বলা হয় "ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা, তাদের নানা গোষ্ঠীর সদস্যদের সম্মানপূর্বক, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাতালান জনগোষ্ঠীর ইচ্ছাকে সমর্থন করে যাবে এবং তা করতে থাকবে সভ্য, শান্তিপূর্ণ এবং অনুকরণীয় উপায়ে"।[৯৮] বার্সেলোনা বোর্ড গণভোটের দিন অনুষ্ঠিতব্য লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচটি সহিংসতার কারণে স্থগিত করার অনুরোধ জানায় কিন্তু লা লিগা কর্তৃপক্ষ তা খারিজ করে দেয়। ফলস্বরূপ ম্যাচটি দর্শকবিহীন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।[৯৯] খেলা চালানোর প্রতিবাদে বার্সেলোনার দুইজন পরিচালক, ইয়র্দি মোনেস এবং কার্লেস ভিলারুবি পদত্যাগ করেন।[১০০]
বার্সেলোনার সমর্থকদের বলা হয় কিউলার (Culer), যা এসেছে কাতালান শব্দ কিউল (Cul) থেকে। স্পেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% বার্সেলোনার সমর্থক এবং রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থক প্রায় ৩২%।[১০১] সমগ্র ইউরোপ জুড়ে, বার্সেলোনা সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বিতীয়-পছন্দের ক্লাব।[১০২] ২০০৩–০৪ মৌসুমে ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০,০০০। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭০,০০০।[১০৩] সদস্যদের পাশাপাশি বার্সেলোনার কিছু নিবন্ধিত ফ্যান ক্লাব রয়েছে। জুন ২০১০ অনুযায়ী, বার্সেলোনার মোট নিবন্ধিত ফ্যান ক্লাবের সংখ্যা ১,৩৩৫। ফ্যান ক্লাবগুলো তাদের এলাকায় বার্সেলোনার প্রচার চালায় এবং বার্সেলোনায় ভ্রমনের সময় লাভজনক প্রস্তাব পেয়ে থাকে।[১০৪] ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিও ছিলেন। যাদের মধ্যে ধর্মজাজক জন পল-২ এবং স্পেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হোসে লুইস রোদ্রিগুয়েজ জাপাতেরো উল্লেখযোগ্য।[১০৫][১০৬] ইউরোপীয় ফুটবলে বার্সেলোনার স্টেডিয়ামে দর্শকদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় উপস্থিতি রয়েছে। গড় উপস্থিতির দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড।[১০৭][১০৮]
একটি জাতীয় লিগে দুইটি সবচেয়ে শক্তিশালী দলের মধ্যে প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাধারনত থাকেই। লা লিগায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে, যা এল ক্ল্যাসিকো নামে পরিচিত। জাতীয় প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই দল দুইটি স্পেনের প্রতিদ্বন্দ্বি দুই রাজ্য কাতালুনিয়া এবং কাস্তিলের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুই রাজ্যের মধ্যকার রাজনৈতিক এবং সংস্কৃতিক উত্তেজনাকেও প্রতিফলিত করে।
প্রিমো দে রিভেরা এবং ফ্রান্সিস্কো ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্রের সময় (১৯৩৯–১৯৭৫), স্পেনে সবধরনের আঞ্চলিক সংস্কৃতি দমিয়ে রাখা হয়েছিল। স্পেনীয় ভাষা ব্যতীত অন্য সকল ভাষা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ছিল।[১০৯][১১০] কাতালান জনগনের স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছার প্রতীক বহন করার মাধ্যমে বার্সেলোনা কাতালানদের কাছে হয়ে ওঠে, ‘‘একটি ক্লাবের চেয়েও বেশি কিছু (Més que un club)’’। লেখক ম্যানুয়েল ভাজকুয়েজ মনতালবানের তথ্য অনুসারে, কাতালানদের পরিচয় প্রদর্শনের সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া। ফ্রাংকো বিরোধী গোপন কোন আন্দোলনের চেয়ে এটি ছিল কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি তাদেরকে তাদের মতপার্থক্য প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দিত।[১১১]
অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদকে দেখা যায়, সার্বভৌমত্ব কেন্দ্রীকরণ এবং ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রনয়নের প্রতিমূর্তিরূপে।[১১২][১১৩] স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের সময় ইয়োসেপ সানিওল এবং রাফায়েল স্যানচেজ গুয়েরার মত উভয় দলেরই কিছু সদস্য ফ্রাংকো সমর্থকদের কারণে ভুক্তভোগী হয়েছিল।
১৯৫০ এর দশকে, আলফ্রেদো দি স্তেফানোর ট্রান্সফার নিয়ে ওঠা বিতর্ক দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যিনি শেষপর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠেন।[১১৪] ১৯৬০ এর দশকে, তাদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইউরোপীয় পর্যায়ে পৌছায়, যখন তারা ইউরোপীয় কাপের নক-আউট পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়।[১৭]
বার্সেলোনার সবসময়কার স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওল। এটি সেসব দলগুলোর মধ্যে একটি, যেগুলোকে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় এবং এটি একচেটিয়াভাবে স্পেনীয় ফুটবলপ্রেমীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা বার্তা পরিষ্কারভাবে বার্সেলোনা বিরোধী ছিল এবং তারা বার্সেলোনাকে বিদেশীদের ক্লাব হিসেবে দেখত।[১১৫] এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জোরদার হয়, যখন কাতালানরা এটিকে মাদ্রিদের উত্তেজক প্রতিনিধি হিসেবে দেখে। তাদের আসল মাঠ ছিল সমৃদ্ধশালী জেলা স্যারিয়ায়।[১১৬][১১৭]
ফ্রাংকোর শাসনামলে, বার্সেলোনার অধিকাংশ নাগরিক এস্পানিওলকে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি এক ধরনের সম্মতির চর্চাকারী ক্লাব হিসেবে দেখেছিল, যা ছিল বার্সেলোনার বিপ্লবী ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।[১১৮] ১৯১৮ সালে, এস্পানিওল স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা-আবেদন শুরু করে, যা সেসময়ের একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় হয়ে উঠেছিল।[১১৫] পরবর্তীতে, স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের সময় এস্পানিওল সমর্থকদের একটি গ্রুপ ফ্যাসিবাদীদের পক্ষ নিয়ে, ফালাঞ্জীদের সাথে যোগ দেয়। মতাদর্শের মধ্যে এমন পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, উদ্দেশ্যজনিত পার্থক্যের কারণে, এই ডার্বি বার্সেলোনার চেয়ে এস্পানিওল সমর্থকদের কাছে বেশি প্রাসঙ্গিক। এস্পানিওল তাদের দাপ্তরিক নাম এবং থিম সংগীত কাতালান ভাষায় অনুবাদ করার কারণে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে রাজনীতি অনেকটাই কমে এসেছে।[১১৫]
যদিও লা লিগার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বেশিবার খেলা ডার্বি, এটিই সবচেয়ে অসম, যেখানে বার্সেলোনা সিংহভাগ কর্তৃত্বপূর্ণ। লা লিগায় ৭০ বারের মুখোমুখিতে মাত্র তিনবার বিজয়ী হতে পেরেছে এস্পানিওল। ১৯৫১ সালে, বার্সেলোনাকে ৬–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে এস্পানিওল, যা তাদের কাছে সান্তনাস্বরূপ। সর্বশেষ ২০০৮–০৯ মৌসুমে, বার্সেলোনাকে তারা ১–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে। বার্সেলোনার প্রথম ট্রেবল জয়ের মৌসুমে, ক্যাম্প ন্যু-তে এটিই ছিল তাদের প্রথম পরাজয়।[১১৯]
২০১০ সালে, ফোর্বস ম্যাগাজিন বার্সেলোনার মূল্য নির্ধারন করে প্রায় ৭৫২ মিলিয়ন ইউরো ($১ বিলিয়ন) এবং তালিকায় তাদেরকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও আর্সেনালের পেছনে চতুর্থ অবস্থানে রাখে। এই তালিকাটি করা হয়েছিল ২০০৮–০৯ মৌসুমের পরিসংখ্যান থেকে।[১২০][১২১] ডেলোইটের তথ্য অনুসারে, একই সময়ে বার্সেলোনার মোট আয় ছিল ৩৬৬ মিলিয়ন ইউরো। এই তালিকায় বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদের পেছনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল, যাদের আয় ছিল ৪০১ মিলিয়ন ইউরো।[১২২]
রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাথলেটিক বিলবাও এবং ওসাসুনার মত বার্সেলোনাও একটি নিবন্ধিত সংস্থা হিসেবে সংগঠিত হয়। এটি কোন লিমিটেড কোম্পানির মত নয়। ক্লাবের শেয়ার ক্রয় করা সম্ভব না হলেও, সদস্যপদ পাওয়া সম্ভব।[১২৩] ক্লাবের সদস্যদের বলা হয় সসিস। ২০১০ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার মোট নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭০,০০০।[১০৩]
২০১০ সালের জুলাইয়ে, ডেলোইট একটি নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ করে, বার্সেলোনার মোট ঋণের পরিমাণ ৪৪২ মিলিয়ন ইউরো। বার্সেলোনার নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি এই ঋণের কারণ হিসেবে সাংগঠনিক সমস্যাকে তুলে ধরে।[১২৪] ঐ বছর বার্সেলোনার লা লিগা শিরোপা জেতার পরও প্রায় ৭৯ মিলিয়ন ইউরো লোকসানের খবর ছড়িয়ে পড়ে।[১২৫]
২০১১ সালে, বার্সেলোনার স্থূল ঋণের পরিমাণ দাড়ায় ৪৮৩ মিলিয়ন ইউরো এবং নিট ঋণের পরিমাণ দাড়ায় ৩৬৪ মিলিয়ন ইউরো।[১২৬] সবধরনের খেলাধুলায় বিশ্বের পেশাদার দলগুলোর মধ্যে খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বেশি গড় পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে বার্সেলোনা, দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ।[১২৭]
বার্সেলোনার হয়ে সবচেয়ে বেশি খেলায় উপস্থিতির রেকর্ডটি বর্তমানে জাভির দখলে (৭৬৭)। তিনি বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায়ও সবচেয়ে বেশি খেলায় মাঠে নেমেছেন (৫০৫)। আগের রেকর্ডটি ছিল মিগুয়েলির (৩৯১)।[১২৮]
প্রীতি খেলাসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওনেল মেসি (৪৫৫ গোল)।[১২৮][১২৯] প্রীতি খেলা ছাড়া, সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওনেল মেসি (৪৪০)। তিনি ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা (যথাক্রমে ৭৮ গোল ও ৮৩ গোল)[১৩০] এবং লা লিগাতেও ২৮৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা। বার্সেলোনার হয়ে মাত্র চারজন খেলোয়াড় লা লিগায় ১০০ গোলের মাইলফলক পাড় হতে পেরেছেন: লিওনেল মেসি (২৪৩), সিজার রোদ্রিগেজ (১৯২), লাজলো কুবালা (১৩১), স্যামুয়েল ইতো (১০৮)।
২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, সান্তেন্দারের বিপক্ষে মেসি একটি গোল করেন, যা ছিল বার্সেলোনার ৫০০০তম লিগ গোল। খেলায় বার্সা ২–১ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে।[১৩১] ২০০৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে এস্তুদিয়ান্তেসকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ সম্ভব ছয়টি শিরোপার সবকয়টি জেতার রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা।[১৩২]
বার্সেলোনার ঘরের মাঠে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিল ১২০,০০০, ১৯৮৬ সালের ৩ মার্চ, জুভেন্টাসের বিপক্ষে ইউরোপীয় কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালের খেলায়।[১৩৩] ১৯৯০-এর দশকে ক্যাম্প ন্যু-এর আধুনিকিকরণের পর এই রেকর্ড ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। কেননা, স্টেডিয়ামটির বর্তমান ধারণ ক্ষমতা ৯৯,৩৫৪।[১৩৪]
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্লাবের নিজস্ব ক্রেস্ট ছিল, যা ক্লাবের খেলোয়াড়গন নিজেদের শার্টে পরিধান করতেন। ক্লাবের প্রথম ক্রেস্ট ছিল চার ভাগে বিভক্ত হীরক আকৃতির, যার উপরে ছিল একটি মুকুট এবং মুকুটের উপরে ছিল একটি বাদুর। ক্রেস্টটির দুই পাশ ছিল দুইটি শাখা দিয়ে ঘেরা, একটি গুল্ম জাতীয় বৃক্ষের এবং অন্যটি তাল জাতীয় বৃক্ষের।[১৩৫] ১৯১০ সালে, ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিষদ নতুন ক্রেস্ট ডিজাইন করার জন্য ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন ক্লাবেরই খেলোয়াড় কার্লোস কোমামালা। কোমামালার ডিজাইন এবং বার্সেলোনার বর্তমান ক্রেস্টের ডিজাইনের মধ্য খুব সামান্যই পার্থক্য রয়েছে। তার ডিজাইনে ক্রেস্টের উপরের অংশে বাঁদিকে ছিল সেন্ট জর্জের ক্রুশ ও ডানদিকে ছিল কাতালান পতাকা এবং নিচের অংশে ছিল দলীয় রং।[১৩৫]
১৯১০ সালের পর থেকে ক্রেস্টের তেমন কোন পরিবর্তন না করা হলেও, ফ্রাংকোর শাসনামলে এর উপর লেখা এফসিবি (FCB) পরিবর্তন করে সিএফবি (CFB) বসিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটলে, ১৯১০ সালের ক্রেস্টটি পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়। বার্সেলোনার বর্তমান ক্রেস্টটি ক্লারেত সিরাহিমার ডিজাইন করা। এটি ডিজাইন করা হয় ২০০২ সালে।[১৩৫]
নীল এবং লাল রং-এর শার্ট প্রথম পরিহিত হয় ১৯০০ সালে, হিসপানিয়ার বিপক্ষে খেলায়।[১৩৬] বার্সেলোনার শার্টের লাল এবং নীল রং-এর ডিজাইনের জন্য বহু প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্ব প্রকাশিত হয়। বার্সেলোনার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আর্থর উইতির পুত্র দাবী করেন, এই পরিকল্পনাটি ছিল তার বাবার। লেখক টনি স্ট্রাবেলের মতে, রংগুলো প্রথম ফরাসি প্রজাতন্ত্র থেকে নেওয়া। তবে কাতালানদের সাধারণ উপলব্ধি হল, রংগুলো জোয়ান গাম্পেরের পছন্দ করা, যা তার ঘরের দল এফসি বাসেলের।
বার্সেলোনার কর্পোরেট স্পন্সরশীপ এড়িয়ে চলার অনেক লম্বা ইতিহাস রয়েছে। ২০০৬ সালের ১৪ জুলাই, বার্সেলোনা ইউনিসেফের সাথে পাঁচ বছরের চুক্তির কথা ঘোষণা করে। তাদের শার্টে ইউনিসেফের লোগো স্থাপন এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া এফসি বার্সেলোনা ফাউন্ডেশন কর্তৃক ইউনিসেফকে প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন ইউরো অনুদানের বিষয়টিও এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এফসি বার্সেলোনা ফাউন্ডেশন স্থাপিত হয় ১৯৯৪ সালে, ক্লাবের অর্থনৈতিক কমিটির তত্কালীন চেয়ারম্যান জেইমি গিল-আলুজার পরামর্শে। এই ফাউন্ডেশন স্থাপিত হয় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য, যারা অলাভজনক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা করবে।
২০১১–১২ মৌসুম শুরুর পূর্বে বার্সেলোনা কর্পোরেট স্পন্সরশীপের প্রতি তাদের অনীহা প্রত্যাখ্যান করে এবং কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টের সাথে ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পাঁচ বছরের চুক্তি সাক্ষর করে। যার ফলে ২০১১–১২ এবং ২০১২–১৩ মৌসুমে বার্সার শার্টে ‘‘কাতার ফাউন্ডেশন’’ লেখা ছিল, যা ২০১৩–১৪ মৌসুমে ‘‘কাতার এয়ারওয়েজ’’ লেখা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।[১৩৭] ২০১৭ সালে বার্সেলোনা জাপানি প্রতিষ্ঠান "রাকুটেন" এর সাথে শার্ট স্পন্সরশীপ চুক্তি স্বাক্ষর করে যা ২০১৭-১৮ মৌসুম থেকে কার্যকর রয়েছে।
সময়কাল | ক্রীড়া সরঞ্জাম সরবরাহকারী | প্রধান শার্ট স্পন্সর | শার্ট উপ-স্পন্সর |
---|---|---|---|
১৮৯৯–১৯৮২ | |||
১৯৮২–১৯৯২ | মেইবা | ||
১৯৯২–১৯৯৮ | কাপ্পা | ||
১৯৯৮–২০০৬ | নাইকি | ||
২০০৪–২০০৬ | টিভি৩ (বাম হাতা) | ||
২০০৬–২০১১ | ইউনিসেফ | ||
২০১১–২০১৩ | কাতার ফাউন্ডেশন | ইউনিসেফ (শার্টের পিছনে) | |
২০১৩–২০১৪ | কাতার এয়ারওয়েজ | ||
২০১৪–২০১৭ | বেকো (বাম হাতা) ও ইউনিসেফ (শার্টের পিছনে) | ||
২০১৭–২০২১ | রাকুটেন | ||
২০২১–২০২২ | ইউনিসেফ (শার্টের পিছনে) | ||
২০২২–২০২৩ | স্পটিফাই | ইউএনএইচসিআর (শার্টের পিছনে) | |
২০২৩– | অ্যাম্বিলাইট টিভি (বাম হাতা) & ইউএনএইচসিআর (শার্টের পিছনে) |
বার্সেলোনার প্রথম স্টেডিয়াম ছিল কাম্প দে লা ইন্দাস্ত্রিয়া। এর ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ৬,০০০। ক্লাবের কর্মকর্তাগন ক্রমবর্ধমান সদস্যদের জন্য এর সুযোগ সুবিধা অপর্যাপ্ত বলে গন্য করেন।[১৩৮]
১৯২২ সালে, ক্লাবের সমর্থকদের সংখ্যা ২০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। তারা ক্লাবটিকে অর্থেনৈতিক সহযোগিতা দেয়, যার ফলে বার্সেলোনা কাম্প দে লেস কোর্তস্ স্টেডিয়াম নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করে, যার প্রাথমিক ধারণ ক্ষমতা ছিল ২০,০০০। স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের পর, বার্সেলোনা স্টেডিয়ামে আরও বেশি সংখ্যক দর্শক আকৃষ্ট করতে শুরু করে। ফলে ক্লাবটিকে একাধিকবার স্টেডিয়ামের সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নিতে হয়: ১৯৪৪ সালে গ্যালারির ছাউনিযুক্ত দিকে, ১৯৪৬ সালে দক্ষিণ গ্যালারি এবং সর্বশেষ ১৯৫০ সালে উত্তর গ্যালারি সম্প্রসারিত করা হয়। সর্বশেষ সম্প্রসারণের পর স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা হয় ৬০,০০০।[১৩৯] নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর লেস কোর্তস্ স্টেডিয়ামের সম্প্রসারণ আর সম্ভব ছিল না। ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে পরপর দুইবার লা লিগা শিরোপা জয় এবং লাদিসলাও কুবালার সাথে চুক্তি, যিনি পরবর্তীতে ২৫৬ খেলায় ১৯৬ গোল করেছিলেন, বার্সেলোনার স্টেডিয়ামে দর্শক সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।[১৩৯][১৪০][১৪১] ফলে বার্সেলোনা নতুন একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে।[১৩৯] কাম্প ন্যু-এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৫৪ সালের ২৮ মার্চ। প্রায় ৬০,০০০ বার্সা সমর্থকদের সামনে স্টেডিয়ামের প্রথম প্রস্তর স্থাপন করেন গভর্নর ফিলাইপ একিদো কলুঙ্গা। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে তিন বছর। কাজ শেষ হয় ১৯৫৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজে মোট ব্যয় হয় ২৮৮ মিলিয়ন স্পেনীয় পেসেতা, যা ছিল মূল বাজেটের ৩৩৬% বেশি।[১৩৯]
১৯৮০ সালে, উয়েফার নীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য স্টেডিয়ামটি পুনরায় ডিজাইন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রত্যেকটি ইটে সামান্য অর্থের বিনিময়ে সমর্থকদের নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ প্রদান করে বার্সেলোনা অর্থ সংগ্রহ করে। এই পরিকল্পনাটি সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং অসংখ্য সমর্থক এই অর্থ পরিশোধ করে। পরে এটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়, যখন মাদ্রিদের সংবাদ মাধ্যম প্রচার করে যে স্টেডিয়ামের একটি ইটে রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ফ্রাংকো সমর্থক সান্তিয়াগো বের্নাব্যু’র নাম লেখা রয়েছে।[১৪২][১৪৩][১৪৪] ১৯৯২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রস্তুতি হিসেবে পূর্ব রুফলাইনের উপর দুইটি স্তর স্থাপন করা হয়।[১৪৫] স্টেডিয়ামটির বর্তমান দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৯৯,৭৮৬, যা এটিকে ইউরোপের বৃহত্তম স্টেডিয়ামের মর্যাদা প্রদান করেছে।
এছাড়া আরও কিছু সুযোগ সুবিধা আছে, যার মধ্যে রয়েছে:[১৪৬]
২০১৬ সালের ১৫ মে অনুসারে, বার্সেলোনা ২৬টি লা লিগা, ৩১টি কোপা দেল রে, ১৩টি স্পেনীয় সুপার কোপা, ৩টি কোপা এভা দুয়ার্তে এবং ২টি কোপা দে লা লিগা শিরোপা জিতেছে। ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৪টি উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ, ৫টি উয়েফা সুপার কাপ এবং ৩টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে।[১৪৭] এছাড়া তারা রেকর্ড তিনবার ইন্টার সিটিজ ফেয়ার্স কাপ শিরোপাও জিতেছে, যা উয়েফা কাপ বা ইউরোপা লিগের পূর্বসুরী।
বার্সেলোনাই একমাত্র ইউরোপীয় ক্লাব যারা ১৯৫৫ সালের পর থেকে প্রতিটি মৌসুমেই মহাদেশীয় ফুটবলে অংশগ্রহণ করেছে এবং রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাথলেটিক বিলবাও-এর সাথে তাদেরও কখনও লা লিগা থেকে দ্বিতীয় বিভাগে অবনমন ঘটেনি। ২০০৯ সালে, বার্সেলোনা প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল শিরোপা জয় করে এবং ঐ বছর ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম ক্লাব হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে সাম্ভব্য ছয়টি শিরোপার সবকয়টি জিতার মাধ্যমে সেক্সটাপল সম্পন্ন করে। ঐ বছর বার্সেলোনার শিরোপা তালিকায় ছিল: লা লিগা, কোপা দেল রে, স্পেনীয় সুপার কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপীয়ান সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।[১৪৭] ২০১৪-১৫ মৌসুমে, বার্সেলোনা ইউরোপের প্রথম ক্লাব হিসেবে দুইবার ট্রেবল জয়ের রেকর্ড গড়ে।
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
টীকা: পতাকা জাতীয় দল নির্দেশ করে যা ফিফার যোগ্যতার নিয়মের অধীনে নির্ধারিত হয়েছে। খেলোয়াড়দের একাধিক জাতীয়তা থাকতে পারে যা ফিফা ভুক্ত নয়।
|
|
অবস্থান | কর্মী |
---|---|
প্রধান কোচ | শাবি এর্নান্দেস |
সহকারী কোচ | ফেলিপ অর্তিজ (অন্তর্বর্তীকালীনী) |
ফিটনেস কোচ | আলবের্ত রোকা দানিয়েল রোমেরো জাউমে বার্ত্রা |
গোলরক্ষক কোচ | হোসে রামোন দে লা ফুয়েন্তে |
ফিজিওথেরাপিস্ট | জাভিয়ের এলাইন হুয়ানহো ব্রাউ জাভি লোপেজ জাভি লিন্দে জর্দি মেসায়েস সেবাস সালাস দানিয়েল বেনিতো |
ডাক্তার | জাভিয়ের ইয়ানগুয়াস রিকার্দ প্রুনা দানিয়েল ফ্লোরিত |
প্রতিনিধি | কার্লেস নাভাল |
ফুটবল সচিব | রামন প্লানেস |
বার্সেলোনা বি কোচ | হোসে মারি বাকেরো |
বার্সেলোনা বি সচিব | ফ্রান্সেস জাভিয়ের গার্সিয়া পিমিয়েন্তা |
যুব ফুটবল প্রধান | পাট্রিক ক্লুইভার্ট |
সর্বশেষ হালনাগাদ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
সূত্র: এফসি বার্সেলোনা
অফিস | নাম |
---|---|
প্রেসিডেন্ট | জুয়ান লাপোর্তা |
প্রেসিডেন্ট কমিশন | রামোন আদেয় |
সামাজিক বিভাগের সহকারী প্রেসিডেন্ট | জর্দি কার্দোনের |
প্রতিষ্ঠানগত বিভাগের সহকারী প্রেসিডেন্ট | কার্লেস ভিলারুবি |
ক্রীড়া বিভাগের সহকারী প্রেসিডেন্ট | ইয়র্দি মেস্ত্রে |
মার্কেটিং ও যোগাযোগ বিভাগের সহকারী প্রেসিডেন্ট | মানেল আরয়ো |
এস্পাই বার্সা কমিশনার | ইয়র্দি মইক্স |
বার্সা নবীকরণ কেন্দ্রের কমিশনার | ইয়র্দি মোনেস |
কোষাধ্যক্ষ | ফেরান অলিভে |
বোর্ড সেক্রেটারি | জোসেপ কুবেলস |
বোর্ড সহকারী সেক্রেটারি | মারিয়া তিক্সিদোর |
ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক (ফুটবল) | হাভিয়ের বোরদাস |
ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক (বাস্কেটবল) | হোয়ান ব্লাদে |
ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক (ফুটসাল) | ইয়োসেপ রামোন ভিদাল-আবারকা |
ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক (যুব ফুটবল) | সিলভিয়ো এলিয়াস |
ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক (হ্যান্ডবল) | হোয়ান ব্লাদে |
ক্রীড়া বিভাগের পরিচালক (অপেশাদার যুব ফুটবল) | শাভিয়ের ভিলায়োয়ানা |
বোর্ড সদস্য | দিদাক লি |
বোর্ড সদস্য | রামন পন্ট |
বোর্ড সদস্য | পাউ ভিলানোভা |
বোর্ড সদস্য | এমিলি রোসাদ |
বোর্ড সদস্য | ওরিয়োল তমাস |
সর্বশেষ হালনাগাদ: ১৬ জুলাই ২০১৭
সূত্র: এফসি বার্সেলোনা
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। Deloitte UK। সংগ্রহের তারিখ March 2022। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; fcbarcelona7
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি|তারিখ=
(সাহায্য)
পুরস্কার | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী স্পেন জাতীয় ফুটবল দল |
লরেয়াস বর্ষসেরা দল ২০১১ |
উত্তরসূরী ইউরোপীয় রাইডার কাপ দল |