লা মাসিয়া দি কান প্লানেস | |
---|---|
স্পেনের মধ্যে অবস্থান | |
বিকল্প নাম | লা মাসিয়া |
সাধারণ তথ্য | |
শহর | বার্সেলোনা |
দেশ | স্পেন |
স্থানাঙ্ক | ৪১°২২′৫৯″ উত্তর ২°০৭′২৩″ পূর্ব / ৪১.৩৮৩১° উত্তর ২.১২৩১° পূর্ব |
নির্মাণকাজের সমাপ্তি | ১৭০২ |
পুনঃসংস্কার | ১৯৬৬ |
স্বত্বাধিকারী | ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা |
লা মাসিয়া দি কান প্লানেস, যা সাধারনত লা মাসিয়া, (উচ্চারিত: , বাংলা: "খামারঘর"),[১] নামে পরিচিত, ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার একটি প্রশিক্ষন কেন্দ্র যা বার্সেলোনার লেস কোর্তস জেলায় ক্যাম্প ন্যু এর নিকটে অবস্থিত। এটি সাধারনত বার্সেলোনার যুব একাডেমী হিসেবে পরিচিত।
লা মাসিয়াতে ৩০০ এরও বেশি যুব খেলোয়াড় রয়েছেন এবং ২০০২ সাল থেকে এটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা যুব একাডেমী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হচ্ছে। বার্সেলোনার সফলতার মূল হিসেবে এটিকে দেখা হয়, এমনকি ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপে স্পেন জাতীয় দলের সফলতার মূলেও ছিল লা মাসিয়া। ২০১০ সালে লা মাসিয়া একটি রেকর্ড অর্জন করে। ফিফা ব্যালোন দি’অরে একই বছর চূড়ান্ত মনোনীত তিন জনই ছিলেন লা মাসিয়া থেকে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত (জাভি, মেসি এবং ইনিয়েস্তা)।[২] দলানটি একটি প্রাচীন পল্লিনিবাস, যা ১৭০২ সালে নির্মিত হয়। ১৯৫৭ সালে ক্যাম্প ন্যু এর উদ্বোধনের পর দালানটিকে ক্লাবের সামাজিক সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এর পুননির্মাণ এবং সম্প্রসারণ করা হয়। ধীরে ধীরে ক্লাবটির বিস্তারের ফলে সদরদপ্তর হিসেবে দালানটি খুব ছোট হয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ২০ অক্টোবর, লা মাসিয়াকে বার্সেলোনার বাহিরে থেকে আসা যুব খেলোয়াড়দের শয়নাগারে রূপান্তরিত করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ জুন, লা মাসিয়াকে যুব খেলোয়াড়দের বাসস্থান হিসেবে স্থগিত করা হয়। সহজ কথায়, এর দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং মাসিয়া-সেন্ত্রে দি ফর্মাসিও অরিওল তর্তকে, যা সিউতাত এস্পোর্তিভা জোয়ান গাম্পারে অবস্থিত, যুব খেলোয়াড়দের নতুন বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু করা হয়।
লা মাসিয়া ছিল একটি প্রাচীন পল্লিনিবাস, যা ১৭০২ সালে নির্মিত হয়। ১৯৫৪ সালে এটিকে কিনে নেয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। প্রথমে এটিকে ক্লাবের নতুন স্টেডিয়াম ক্যাম্প ন্যু এর স্থপতি, প্রকৌশলী এবং নির্মাতাদের কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, ক্যাম্প ন্যু এর উদ্বোধনের পর এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এনরিক লওদেত এর সভাপতিত্বের অধীনে এটির পুননির্মাণ এবং সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৬৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, ক্লাবের সদরদপ্তর হিসেবে এটিকে পুনরায় চালু করা হয়। ক্লাবটির বিস্তারের ফলে এর কর্মচারীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ নুনেজ দালানটি পুননির্মাণ করেন এবং এটিকে বার্সেলোনার বাহিরে থেকে আসা যুব খেলোয়াড়দের বাসস্থানে রূপান্তরিত করেন।[৩] নুনেজকে যুব একাডেমীর প্রস্তাব দেন ইয়োহান ক্রুইফ, যিনি বার্সেলোনা এবং আয়াক্স যুব একাডেমীর প্রাক্তন খেলোয়াড় ছিলেন। নুনেজ অরিওল তর্তকে এর পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন।
একাডেমীর প্রথম স্নাতকদের অন্যতম ছিলেন জুলের্মো অমোর। ১৯৮৮ সালে তার অভিষেক হয় এবং তিনি প্রথম দলের হয়ে ৩১১টি লা লিগার খেলায় মাঠে নামেন। এর দুই বছর পর আসেন গোলরক্ষক কার্লেস বুস্কুয়েটস এবং মধ্যমাঠের খেলোয়াড় পেপ গার্দিওলা।[৪] এই তিন জনেরই প্রথম দলে অভিষেক হয় ইয়োহান ক্রুইফের অধীনে, যিনি ১৯৮৮ সালে দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব নেন। তিনি দলকে টোটাল-ফুটবল থেকে উদ্ভূত “টিকি-টাকা” কৌশলে খেলাতে শুরু করেন, যেটিকে পরবর্তীতে বার্সেলোনার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়।[৫][৬][৭] গার্দিওলা ছিলেন একজন পূর্ণবিকশিত টোটাল-ফুটবল মিডফিল্ডার, যিনি পরবর্তীতে জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং সেস্ ফ্যাব্রিগাসের মত মিডফিল্ডারদের জন্য অনুপ্রেরণা ছিলেন।[৮]
২০০৭ সালের মে মাসে, গার্দিওলাকে বার্সেলোনা বি দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেসময় দলটি সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল এবং তাদের অবনমন ঘটে স্পেনের চতুর্থ সারির লীগে। ফলে বার্সেলোনা সি দলকে বন্ধ করে দিতে হয়, যারা ঐ চতুর্থ লীগে খেলত। বি দলে গার্দিওলা একুশোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের স্থান সহজলভ্য করেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা। দলটিকে পুনসংগঠিত করার পর গার্দিওলা ক্লাব প্রেসিডেন্ট লাপোর্তাকে আরও ভাল প্রশিক্ষনের জন্য প্রনোদিত করেন এবং যুব দলকে সিউতাত এস্পোর্তিভা জোয়ান গাম্পারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৭–০৮ মৌসুম শেষে বার্সেলোনা বি তৃতীয় সারির লীগ সেগুন্দা বি এবং ২০০৮–০৯ মৌসুম শেষে দ্বিতীয় সারির লীগ সেগুন্দা দিভিশনে উন্নীত হয়, যা একটি রিজার্ভ দলের জন্য প্রথম সারি ছিল (প্রথম দল প্রিমেরা দিভিশনে খেলে)।
লা মাসিয়া সবচেয়ে বেশি প্রচারণা পায় বার্সেলোনা বি দলের সফলতার পর। ররি স্মিথ দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যে লা মাসিয়া খেলোয়াড় তৈরির দিক থেকে আয়াক্স একাডেমীকে ছাড়িয়ে গেছে।[৯]
লা মাসিয়ার উদ্বোধনের পর থেকে ৫০০ এরও বেশি তরুণ নিজেদের ঘর এবং পরিবার ছেড়েছে একাডেমীতে থাকার জন্য। এদের প্রায় অর্ধেকই ছিল কাতালোনিয়া থেকে এবং বাকিরা ছিল স্পেনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে। এছাড়া অন্যদের মধ্যে ক্যামেরুন থেকে ছিল ১৫ জন, ব্রাজিল থেকে ছিল ৭ জন, সেনেগাল থেকে ছিল ৫ জন এবং আর্জেন্টিনা থেকে ছিল ৩ জন। এই ৫০০ জনের মধ্যে দশ শতাংশ খেলোয়াড় প্রথম দলে নিজেদের জায়গা করে নিতে পেরছে।[১০]
লা মাসিয়াতে প্রায় ৬০ জন খেলোয়াড় থাকেন। যাদের ১০ জন থাকেন খামাড়ঘরে এবং বাকিরা থাকেন স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিভিন্ন ঘরে।[৩][১১] এটি ইউরোপের সবচেয়ে ব্যয়বহুল একাডেমীগুলোর মধ্যে অন্যতম, যার বার্ষিক খরচের পরিমাণ প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউরো। যুব প্রকল্পটিতে সর্বনিম্ন ছয় বছর বয়সের বালকদের নেওয়া হয়। প্রতি বছর ছয় থেকে আট বছর বয়সের ১০০০ এরও বেশি বালক ভর্তির জন্য প্রচেষ্টা চালায়। তাদের মধ্যে সেরা ২০০ জনকে নির্বাচিত করা হয়।[১২] এছাড়া ক্লাবটি প্রত্যাশিত যুব খেলোয়াড়দেরই কামনা করে। যুব খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার জন্য তারা একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে, যাতে ১৫ জন স্কাউটকে কাতালোনিয়ায়, ১৫ জনকে স্পেনের অন্যান্য অঞ্চলে এবং ১০ জনকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়োগ করা হয়। স্কাউটিং এর খরচ কমানোর জন্য বার্সেলোনার স্থানীয় ১৫টি ক্লাবের সাথে চুক্তি রয়েছে। এই ক্লাবগুলো সেই সব খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে যারা একাডেমীতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত নয়। তাদের এই সহযোগিতার জন্য প্রত্যুত্তরে বার্সেলোনা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও তাদেরকে প্রশিক্ষন এবং প্রায়োগিক উপদেশও দিয়ে থাকে বার্সেলোনা।[১৩] বহির্বিশ্বে তাদের কার্যকলাপ প্রসারিত করার জন্য ক্লাবটি মেক্সিকোতে পাঁচটি এবং মিশরে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে। সফল আবেদনকারীরা এই বিদ্যালয়গুলোর পূর্ণকালীন শিক্ষার্খীতে পরিণত হয় এবং এই বিদ্যালয়গুলো তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ফুটবল প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে।
ক্লাবের মূল যুব দল বার্সেলোনা বি। এছাড়া আরও ১২টি দল রয়েছে, যেগুলোতে আছে ৩০০ এরও বেশি খেলোয়াড় এবং দায়িত্বে আছেন ২৪ জন কোচ। এছাড়াও রয়েছেন ডাক্তার, মনোবিজ্ঞানী, পুষ্টিবিজ্ঞানী, রাঁধুনী এবং শারীরবিজ্ঞানী সহ মোট ৫৬ জন অন্যান্য কর্মচারী।[১৪] ২০০৯–১০ মৌসুমে বার্সেলোনা বি আবারও সেগুন্দা দিভিশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়। মূল দলের মত বি দলও ৪-৩-৩ বিন্যাসে খেলে থাকে।[১৫]
স্কোয়াড | বয়স | আকার | কোচ |
---|---|---|---|
বার্সেলোনা বি[n ১] | – | ২৬ | ইউসেবিয় সাক্রিস্তান |
জুভেনিল এ | ১৬–১৮ | ২২ | জর্দি ভিনিয়ালস[১৭] |
জুভেনিল বি | ১৬–১৮ | ২২ | ফ্রান্সেস্ক জাভিয়ের গার্সিয়া পিমিয়েন্তা |
ক্যাদেতে এ | ১৪–১৫ | ২০ | কুইকে আলভারেজ স্যান হুয়ান |
ক্যাদেতে বি | ১৪–১৫ | ২২ | ফ্রাঙ্ক আর্তিগা কেব্রিয়ান |
ইনফান্তিল এ | ১৩–১৪ | ২০ | দেনিস সিলভা পুইগ |
ইনফান্তিল বি | ১৩–১৪ | ২২ | মার্সেল সান্স নাভারো |
আলেভিন এ | ১১–১২ | ১৩ | মার্ক সেরা গ্রেগরি |
আলেভিন বি | ১১–১২ | ১৩ | জর্দি ফন্ত অ্যালোয় |
আলেভিন সি | ১১–১২ | ১২ | অ্যালেক্স গোমেজ কমেস |
আলেভিন ডি | ১১–১২ | ১২ | জাভি ব্রাভো গিমেনেজ |
বেনজামিন এ | ৯–১০ | ১১ | সার্জি মিলা হেরেরো |
বেনজামিন বি | ৯–১০ | ১০ | ক্রিস্তিয়ান কাতেনা ফুয়েন্তেস |
বেনজামিন সি | ৯–১০ | ১২ | ক্রিস্তিয়ান কাতেনা ফুয়েন্তেস |
বেনজামিন ডি | ৯–১০ | ১২ | আস্কার হের্নান্দেজ রমেরো |
প্রিবেনজামিন | ৭–৮ | ১০ | দেভিদ স্যানচেজ দমিনি |
২০০৯ সালে, মেসি লা মাসিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালোন দি’অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন।[১৮] এছাড়া ঐ বছর শীর্ষ পাঁচের মধ্যে ছিলেন জাভি ও ইনিয়েস্তা, যারা উভয়েই লা মাসিয়ার প্রাক্তন খেলোয়াড়।[১৯]
২০১০ সালের ১১ জুলাই, স্পেন বিশ্বকাপের ফাইনালে জয় লাভ করে। স্পেন দলের আট জনই ছিলেন বার্সেলোনা থেকে, যার মধ্যে সাত জন ছিলেন লা মাসিয়া থেকে, এবং এদের ছয় জন প্রথম দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন: হেরার্দ পিকে, কার্লেস পুইয়োল, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজ, সার্জিও বুস্কুয়েটস্, এবং পেদ্রো রদ্রিগুয়েজ।[২০] রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয় স্পেনের বিশ্বকাপ সফলতা সম্ভব হয়েছে লা মাসিয়ার কারণেই।[২১] জার্মানির কোচ জোয়াকিম লও স্পেনের বিপক্ষে তার দলের পরাজয়ের পর বলেন যে স্পেন কিছুটা বার্সেলোনা কৌশলে খেলে।[২২]