শোলে | |
---|---|
পরিচালক | রমেশ সিপ্পী |
প্রযোজক | জি. পি. সিপ্পী |
চিত্রনাট্যকার | সলিম-জাভেদ |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | রাহুল দেব বর্মণ |
চিত্রগ্রাহক | দ্বারকা দিবেচা |
সম্পাদক | এম. এস. শিন্দে |
প্রযোজনা কোম্পানি | ইউনাইটেড প্রোডিউসার্স সিপ্পী ফিল্মস |
পরিবেশক | সিপ্পী ফিল্মস |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ২০৪ মিনিট[১][ক] |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ₹৩০ মিলিয়ন[৩] |
আয় | প্রা.₹১৫০ মিলিয়ন[৪] |
শোলে (হিন্দি: शोले; ⓘ, অর্থ "অঙ্গার") ১৯৭৫ সালের একটি হিন্দি-ভাষী অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেছিলেন রমেশ সিপ্পী এবং প্রযোজনা করেছিলেন তার বাবা জি. পি. সিপ্পী। কাহিনী অনুসারে, দুই সাধারণ অপরাধী বীরু ও জয়কে (ধর্মেন্দ্র ও অমিতাভ বচ্চন) প্রাক্তন পুলিশ অফিসার নিযুক্ত করেন নিষ্ঠুর ডাকাত গব্বর সিংকে (আমজাদ খান) ধরবার জন্যে। হেমা মালিনী এবং জয়া ভাদুড়ি অভিনয় করেছেন বীরু ও জয়ের প্রণয়ী রূপে। শোলে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং ধ্রুপদী চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট প্রকাশিত সর্বকালের "শীর্ষ দশটি ভারতীয় চলচ্চিত্র" তালিকাতে এটি প্রথম স্থান পায়। ২০০৫ সালে ৫০তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের বিচারকগণ এটিকে "৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র" বলে অভিহিত করেন।
কর্ণাটকের দক্ষিণ রাজ্য রামনগরের পাথুরে ভূমিতে চলচ্চিত্রটির অধিকাংশ শুটিং করা হয়েছে, সময় লেগেছে প্রায় আড়াই বছর। ভারতীয় সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের আদেশে বেশ কয়েকটি ভায়োলেন্ট দৃশ্য কাটছাঁট করে ১৯৮ মিনিট দৈর্ঘ্যে মুক্তি পায়। ১৯৯০ সালে পরিচালকের আসল আনকাট ২০৪ মিনিটের সংস্করণ সারাদেশে সুলভ হয়ে ওঠে। প্রথম প্রকাশের পর শোলে নেতিবাচক সমালোচনা ও একটু কড়াধাঁচের বাণিজ্যিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু দর্শকদের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়ে তা বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে। এটি ভারতের অনেক প্রেক্ষাগৃহে একটানা প্রদর্শনীর নতুন রেকর্ড গড়ে এবং মুম্বাইয়ের মিনের্ভা থিয়েটারেতা চলে পাঁচ বছরের বেশি। কোনো কোনো হিসাবমতে,শোলে সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী ভারতীয় চলচ্চিত্র, মুদ্রাস্ফীতি ও অন্যান্য কারণে।
চলচ্চিত্রটিতে ওয়েস্টার্ন ধরনের অনেক উপাদান ছিল এবং এটি মসালা চলচ্চিত্রের একটি সংজ্ঞাবাচক উদাহরণ। বিখ্যাত ওয়েস্টার্ন সিনেমা 'ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন' ও 'ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন ওয়েস্টে'র সাথে গল্পের প্রভুত মিল থাকলেও শোলে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। পণ্ডিতগণ চলচ্চিত্রটির বেশ কয়েকটি থিমের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন রক্তারক্তি বা ভায়োলেন্সকে ভালোরূপে দেখানো, সামন্ততান্ত্রিক চিন্তাভাবনার সাথে সাদৃশ্য, সামাজিক ক্রমধারা এবং সংহত জবরদখলের মধ্যে বিতর্ক, বন্ধুত্বের বন্ধন, এবং একটি জাতীয় রূপক হিসেবে এর ভূমিকা। রাহুল দেববর্মণের তৈরি চলচ্চিত্রের মূল সাউন্ডট্র্যাক, এবং সংলাপ (পৃথকভাবে প্রকাশিত) একত্রে বিক্রির নতুন রেকর্ড গড়ে। চলচ্চিত্রের সংলাপগুলো এবং কয়েকটি চরিত্র খুবই জনপ্রিয় হয়, সাংস্কৃতিকভাবে অনেক অনুকরণ করা হয়, এবং তা ভারতের প্রতিদিনকার ভাষার অঙ্গ হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে থ্রিডি ফরম্যাটে শোলে মুক্তি দেয়া হয়।
দুই প্রানের বন্ধু বীরু (ধর্মেন্দ্র) ও জয় (অমিতাভ বচ্চন) বিভিন্ন সময় লোক ঠকিয়ে, চুরি করে বাউণ্ডুলে জীবন কাটায়। কোনো বিষয়ে দ্বিমত হলে তারা কয়েন টস করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তারা বহুবার জেল খেটেছে কিন্তু জেল পালাতে সিদ্ধহস্ত। এমনকি ইংরেজ জমানার জাঁদরেল জেলারকে ফাঁকি দিয়ে তারা পালিয়ে আসে। তাদের একবার গ্রেপ্তার করেছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ঠাকুর বলদেব সিং (সঞ্জীব কুমার)। তার মনে পড়ে একদল ডাকাতের সাথে অতীতে বলদেব সিং এর পক্ষ হয়ে লড়াই করেছে এই দুজনে চলন্ত ট্রেন থেকে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জানেন এই দুই আউট-ল বদমাস হতে পারে কিন্তু তারা বাহাদুর। গুলি চালনা, গায়ের জোরে তাদের সাথে এঁটে ওঠা ভার। একদিন তাদের ঠাকুর তলব করেন ও জানান যে রামগড়ের নামকরা ডাকাত গব্বর সিংকে ধরার জন্যে তাকে সাহায্য করতে। সরকার একাজে ₹ ৫০,০০০[খ] রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। আর গব্বরকে জীবিত ধরে আনতে পারলে ঠাকুর তাদেরকে আরো ₹ ২০,০০০ রুপে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। ঠাকুরের গ্রাম রামগড়ের কাছে ডাকাত সর্দার গব্বর (আমজাদ খান) ও তার সাথীরা অমানুষিক অত্যাচার চালায়। গ্রামবাসীদের ফসল ও আনাজপাতি লুঠ করে। জয় এবং বীরু ঠাকুরের আমন্ত্রনে রামগড় আসে। রাস্তায় টাংগাওয়ালী বসন্তী (হেমা মালিনী)র সাথে বীরুর হৃদ্যতা হয়। বীরু বাসন্তীর প্রেম ও সংশ্লিষ্ট হাস্যকৌতুক এই কাহিনীর অন্যতম উপজীব্য হয়ে ওঠে। অপরদিকে ঠাকুর বলদেবের বিধবা পুত্রবধূ রাধা (জয়া ভাদুড়ি) কে জয় পছন্দ করতে শুরু করে। সমাজের বাধা ও সংস্কারকে পরোয়া না করে ঠাকুর সাহেব নিজেও তাদের বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে যান রাধার পিতৃগৃহে। ইতিমধ্যে জয় বীরুর সাথে একাধিকবার গব্বর বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। গব্বরের দলবল মারা পড়তে থাকে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে একছত্র সাম্রাজ্য এই দুই বাহাদুর ছেলের কাছে। হোলির দিন গব্বর বাহিনী গ্রাম আক্রমণ করে। গব্বর প্রায় ধরা পড়তে গিয়েও পালাতে সক্ষম হয় এবং আকস্মিকভাবে জয় ও বীরু জানতে পারে গব্বর অতীতে তাকে বন্দী করার প্রতিশোধ স্বরূপ ঠাকুর সাহেবের দুটি হাতই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, ঠাকুর পরিবারের প্রায় সমস্ত সদস্যকে সে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জেল থেকে পালাবার পরই। এই হলো ঠাকুর-গব্বর শত্রুতার ইতিহাস। একদিন গব্বরের লোকেরা বসন্তীকে ধরে নিয়ে গেলে বীরু তাদের পিছু নেয় এবং ডাকাতদলের হাতে বন্দী হয়। ডাকাত সাম্ভা যখন বন্দীকে খুন করতে উদ্যত তখনই পাহাড়ের ওপর থেকে নিখুঁত নিশানায় তাকে গুলি করে হত্যা করে জয়। কিছু গোলাগুলির পর জয়- বীরু-বাসন্তী ডাকাতদের খপ্পর থেকে পালাতে সক্ষম হলেও জয় জানায় তিনজনে একটি ঘোড়ায় পালানো যাবেনা। সে বসন্তীকে গ্রামে রেখে কার্তুজ সহ ফিরে আসতে নির্দেশ দেয় বীরুকে। সিদ্ধান্ত নিতে টস করা হয় এবং প্রতিবারের মত জয় টসে জেতে কারণ কয়েনের দুটি দিকই হেড, যা জয় একাই জানতো। অভিন্নহৃদয় বন্ধুকে বীরু বাধ্য হয়ে রেখে যায়, এবং ডাকাতদলের সাথে গুলি বিনিময় করতে করতে একসময় জয় মারাত্মক আহত হয়। বীরু ফিরে এসে দেখে জয় মৃতপ্রায় এবং নিজের জীবন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। বীরু একাকী গব্বরের আস্তানায় হানা দিয়ে তাকে মারতে উদ্যত হলে আবির্ভূত হন ঠাকুর যিনি জানান গব্বরকে তিনি জ্যান্ত চান। এবং পায়ের কাঁটাওয়ালা জুতো দিয়ে গব্বরকে আঘাত করেন। গব্বরকে প্রায় খুন করতে উদ্যত এমন সময় পুলিশ এসে ডাকাত সর্দারকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ অফিসার জানান, আইন নিজে হাতে তোলা ঠাকুর সাহেবের উচিত নয় কারণ তিনি এমন একজন সৎ, আদর্শ অফিসার ছিলেন যার উদাহরণ আজো দেওয়া হয়ে থাকে। বন্ধুকে হারিয়ে বীরু ফেরার ট্রেন ধরে রামগড় থেকে। ট্রেনে উঠে নাটকীয় ভাবে সে দেখে বসন্তী সেখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে আগে থেকেই।
বেঙ্গল চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (হিন্দি শাখা)