পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়ন বা পাশ-কাটানো উড়াল বলতে এক ধরনের মহাকাশযাত্রা অভিযানকে বোঝায় যেখানে কোনও কোনও মহাকাশযান অন্য একটি নভোবস্তুর কাছ দিয়ে পাশ কাটিয়ে উড়ে যায়। নভোবস্তুটি সাধারণত মহাকাশযানটির মহাকাশ অনুসন্ধানের একটি লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকে। পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়নকে ইংরেজি পরিভাষায় "ফ্লাই-বাই" (Flyby) বলে। তবে কখনও কখনও পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়নের উদ্দেশ্য হল নভোবস্তুটির মহাকর্ষ টানকে সহায়ক বল হিসেবে ব্যবহার করে (মহাকর্ষীয় সহায়তা) তৃতীয় একটি লক্ষ্যবস্তুর দিকে গতিপথ পরিবর্তন করে উড়ে যাওয়া; এ ব্যাপারটিকে পার্শ্ব-অতিক্রমী গতিমুখ পরিবর্তন বা পাশ কাটিয়ে দিক পরিবর্তন (ইংরেজি swing-by "সুইং-বাই") বলা হয়।[১] যেসব মহাকাশযানকে পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়নের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়, সেগুলিকে পার্শ্ব-অতিক্রমী মহাকাশযান বলে। তবে মহাকাশযান ছাড়াও পৃথিবীর কাছ দিয়ে পাশ কাটিয়ে উড়ে যাওয়া গ্রহাণুগুলি সম্পর্কেও পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়ন কথাটি ব্যবহার করা হতে পারে।[২][৩] পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়নের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল ঘনিষ্ঠতম নিকটাগমন তথা নিকটতম অবস্থানের সময় ও দূরত্ব।[৪]
পার্শ্ব-অতিক্রমী তথা পাশ-কাটানো মহাকাশযানগুলি সৌরজগতের যেকোনও গ্রহ (এমনকি পৃথিবীকেও), উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ও ক্ষুদ্রতর কোনও নভোবস্তুকে পাশ কাটিয়ে ওড়ানোর উদ্দেশ্যে নকশা ও নির্মাণ করা হতে পারে। ইতিহাসে সবচেয়ে সুপরিচিত কয়েকটি পার্শ্ব-অতিক্রমী উড্ডয়নের উদাহরণ হল ১৯৬৫ সালে ম্যারিনার ৪ মহাকাশযানের মঙ্গলগ্রহকে পাশ কাটিয়ে উড়াল, ১৯৭০-এর দশকে উৎক্ষিপ্ত ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ মহাকাশযানের পরবর্তী দশকগুলিতে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহকে পাশ কাটিয়ে উড়াল, ১৯৯৫ সালে গ্যালিলিও মহাকাশযানের শুক্রগ্রহকে পাশ কাটানো, ২০০০ সালে ক্যাসিনি-হয়গেন্সের শনির উপগ্রহ টাইটানকে পাশ কাটানো, ২০০৪ সালে স্টারডাস্ট মহাকাশযানটির ওয়াইল্ড-২ নামক ধূমকেতুকে পাশ কাটানো, ২০০৫ সালে মেসেঞ্জার মহাকাশযানের পৃথিবী, শুক্র ও বুধগ্রহকে পাশ কাটানো, ২০০৭ সালে রোজেটা মহাকাশযানের পৃথিবী ও মঙ্গলগ্রহকে পাশ কাটানো, ২০১৩ সালে জুনো মহাকাশযানের পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে বৃহস্পতিতে গমন, ২০১৫ সালে নিউ হরাইজনসের প্লুটোকে পাশ কাটানো, ২০১৭ সালে ওসাইরিস-রেক্স মহাকাশযানের পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে বেনু নামক গ্রহাণু অভিমুখে গতিমুখ পরিবর্তন।