পাবলো নেরুদা | |
---|---|
জন্ম | রিকার্দো এলিসের নেফতালি রেইয়েস বাসোয়ালতো ১২ জুলাই ১৯০৪ পারাল, মাউলে অঞ্চল, চিলি |
মৃত্যু | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সান্তিয়াগো, চিলি। | (বয়স ৬৯)
পেশা | কবি, কূটনীতিক, সেনেটর |
ভাষা | স্পেনীয়, ইংরেজি, ফরাসি। |
জাতীয়তা | চিলিয় |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার |
|
দাম্পত্যসঙ্গী | মারিজকে আন্তোনিতা হাগেনার ভোগেলসাং (১৯৩০-১৯৪৩ বা ১৯৩০-১৯৬৫) দেলিয়া দেল কাররিল (১৯৪৩-১৯৮৯) |
সন্তান | ১ |
স্বাক্ষর |
রিকার্দো এলিসের নেফতালি রেইয়েস বাসোয়ালতো (১২ জুলাই ১৯০৪ - ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩), যিনি তার ছদ্মনাম এবং পরবর্তীকালে আইনসিদ্ধ নাম পাবলো নেরুদা[১] নামে অধিক পরিচিত, একজন চিলীয় কবি-কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ ছিলনে। তিনি ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। নেরুদা মাত্র তেরো বছর বয়েসে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের কবিতা লিখতে শুরু করেন, তন্মধ্যে ছিল পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহার, গদ্য আত্মজীবনী এবং ভালোবাসার কবিতা, তন্মধ্যে একটি হল ১৯২৪ সালে প্রকাশিত বিশটি কবিতা ভালোবাসার একটি গান হতাশার শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ।
নেরুদা তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন দেশের বহু কূটনীতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং চিলীয় কমিউনিস্ট পার্টির সেনেটর হিসেবে এক মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রপতি গাব্রিয়েল গোন্সালেস ভিদেলা চিলিতে কমিউনিজম বাতিল করলে নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তার বন্ধুরা তাকে বন্দর নগরী বালপারাইসোর একটি বাড়ির বেজমেন্টে মাস খানেক লুকিয়ে রাখে এবং ১৯৪৯ সালে তিনি মাইহু হ্রদের নিকটবর্তী এক গিরিপথ দিয়ে পালিয়ে আর্জেন্টিনা চলে যান। তিনি তিন বছরের আগে আর চিলিতে ফিরে আসেননি। তিনি চিলির সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি সালভাদোর আইয়েন্দের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিলেন এবং স্টকহোম থেকে নোবেল পুরস্কার নিয়ে চিলিতে ফিরে আসার পর আলেন্দে এস্তাদিও নাসিওনালে ৭০,০০০ লোকের সম্মুখে তাকে বই পড়ে শুনাতে আমন্ত্রণ জানান।[২]
নেরুদাকে প্রায়ই চিলির জাতীয় কবি বলে বিবেচনা করা হয়। তার সৃষ্টিকর্মগুলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং প্রভাব বিস্তারকারী। কলম্বীয় ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা তাকে "২০শ শতাব্দীর যে কোন ভাষার সেরা কবি" বলে অভিহিত করেন,[৩] এবং সমালোচক হ্যারল্ড ব্লুম তার দ্য ওয়েস্টার্ন ক্যানন বইতে নেরুদাকে পশ্চিমা রীতির কেন্দ্রীয় লেখক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।
রিকার্দো এলিয়েসের নেফতালি রেইয়েস বাসোয়ালতো ১৯০৪ সালের ১২ই জুলাই চিলির সান্তিয়াগোর ৩৫০ কিমি দক্ষিণের লিনারেস প্রদেশের (বর্তমান বৃহত্তর মাউলে অঞ্চল) পাররাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[৪][৫] তার পিতা হোসে দেল কারমেন রেইয়েস মোরেলস একজন রেলওয়ের কর্মকর্তা এবং মাতা রোসা নেফতালি বাসোয়ালতো ওপাজো একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তার মাতা তার জন্মের দুমাস পর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর পরই রেইয়েস তেমুকোতে পাড়ি জমান। তিনি সেখানে ত্রিনিদাদ কানদিয়া মালভারদে নামক একটি মহিলাকে বিয়ে করেন, যার পূর্বে নয় বছর বয়সী রোদোলফো দে লা রোসা নামক একজন পুত্রসন্তান ছিল।[৬] নেরুদা তেমুকোতে তার সৎভাই রোদোলফো এবং আউরেইয়া তোলরা নামক একজন কাতালান মহিলার সাথে তার পিতার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া সৎবোন লরা হেরমিনিয়া "লরিতা"র সাথে বেড়ে ওঠেন।[৭] তিনি তার প্রথম দিকের কবিতাগুলো ১৯১৪ সালের শীতকালে রচনা করেছিলেন।[৮] নেরুদা একজন নাস্তিক।[৯]
প্রাণে কেমন একটা তোলপাড়,
জ়্বর জ্বর ভাব কিংবা বিস্মৃত ডানা-ভাঙ্গা পাখি,
কিন্তু আমি ঠিকই পথ বের করেছিলাম
ঐ আগুনের
গোপন সংকেতের পাঠ উদ্ধার করে নিয়েছিলাম,
প্রথম অস্পষ্ট লাইনটি লিখেছিলাম,
অস্পষ্ট, সারকথা নেই, কিন্তু খাঁটি,
আগামাথা নেই,
কিন্তু নির্ভেজাল জ্ঞান,
হঠাৎ দেখলাম
স্বর্গের দুয়ার বন্ধ হচ্ছে
আর খুলছে।
"কবিতা", মেমোরিয়াল দে ইসলা নেগ্রা (১৯৬৪) থেকে।
নেরুদার বাবা তার লেখালেখি ও সাহিত্য নিয়ে আগ্রহের বিরোধিতা করলেও স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান ও ভবিষ্যৎ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রালদের মতো আরও অনেকজন থেকে উৎসাহ লাভ করেন। ১৯১৭ সালের ১৮ই জুলাই মাত্র তেরো বছর বয়েসে দৈনিক সংবাদপত্র লা মানানা-তে নেফতালি রেইয়েস নামে স্বাক্ষরিত তার প্রথম লেখা প্রবন্ধ আন্তরিকতা ও অধ্যবসায় প্রকাশিত হয়।[১০] ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থানীয় পত্রিকায় নেফতালি রেইয়েস নামে স্বাক্ষরিত মিস অজোস (আমার চোখ)-সহ তার বহু কবিতা এবং প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯১৯ সালে তিনি ইয়েগোস ফ্লোরালেস দেল মাউলে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন আর সেখানে তিনি তার কবিতা কমুনিওঁ আইডিয়াল বা নকচুর্নো আইডিয়াল-এর জন্য তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯২০ সালের মাঝামাঝি থেকে তিনি পাবলো নেরুদা ছদ্মনাম গ্রহণ করে তিনি কবিতা ও গদ্য প্রকাশ এবং সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি চেক কবি ইয়ান নেরুদা নামানুসারে তার ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়,[১১][১২][১৩] তবে কিছু সূত্রে উল্লেখ করা হয় স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের আ স্টাডি ইন স্কারলেট উপন্যাসের মোরাভীয় বেহালাবাদক উইলমা নেরুদা থেকে তিনি এই নামের অনুপ্রেরণা লাভ করেন।[১৪][১৫] ছদ্মনামে লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে তরুণ এই কবির উদ্দেশ্য ছিল তার কবিতার ব্যাপারে তার পিতার অসম্মতিকে উপেক্ষা করা।
১৯২১ সালে ১৬ বছর বয়সে নেরুদা শিক্ষক হওয়ার অভিপ্রায়ে সান্তিয়াগোতে[১৬] চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি পড়তে যান। তবে তিনি অল্পদিনের মধ্যেই দিন-রাত এক করে তিনি সাহিত্য ও কবিতা লেখায় মন দেন এবং প্রখ্যাত লেখক এদুয়ার্দো বারিয়োসের সহায়তায়[১৭] সে সময়ে চিলির অন্যতম প্রধান প্রকাশক ডন কার্লোস জর্জ নাসিমেন্তোর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ১৯২৩ সালে নাসিমেন্তোর সম্পাদনায় তার কবিতার প্রথম খণ্ড ক্রেপুস্কুলারিও প্রকাশিত হয় এবং এরপর বিশটি কবিতা ভালোবাসার একটি গান হতাশার প্রকাশিত হয়।[১৬] দ্বিতীয় বইটি ছিল ভালোবাসার কবিতার সংকলন যা এতে উল্লিখিত যৌনউদ্দীপনা নিয়ে সমালোচিত হয়, বিশেষ করে লেখকের তরুণ বয়স বিবেচনায়। দুটি সৃষ্টিকর্মই সমাদৃত হয় এবং বহু ভাষায় অনূদিত হয়। এই দশকে বিশটি কবিতার মিলিয়নের অধিক কপি বিক্রি হয় এবং নেরুদার শ্রেষ্ঠকর্ম হয়ে ওঠে। তবে ১৯৩২ সালের পূর্ব পর্যন্ত এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়নি। ১০০ বছর পরের বিশটি কবিতা বইটি স্পেনীয় ভাষার সর্বোচ্চ বিক্রীত কবিতার বই হিসেবে তার স্থান ধরে রেখেছে।[১৬] ২০ বছর বয়সে নেরুদা একজন সফল আন্তর্জাতিক কবি হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেন।[১৬]
১৯২৬ সালে নেরুদা তেন্তাতিভা দেল ওম্ব্রে ইনফিনিতো সংকলন এবং এল হাবিতান্তে ই সু এস্পেরাঞ্জা উপন্যাস প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে আর্থিক হতাশার কারণে তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশ হিসেবে দিল্লি থেকে পরিচালিত ব্রিটিশ উপনিবেশ বার্মার রাজধানী রাঙ্গুনে সম্মানসূচক কনসুলার পদ গ্রহণ করেন। তিনি তখন পর্যন্ত রাঙ্গুন নামক স্থানটির নামই শোনেননি।[১৮] পরবর্তীকালে তিনি কলম্বো (সিলন), বাটাভিয়া (জাভা) এবং সিঙ্গাপুরে কর্মরত ছিলেন।[১৯] বাটাভিয়াতে থাকাকালীন তিনি ওলন্দাজ ব্যাংকের কর্মকর্তা মারিইকে আন্তোনিয়েতা হাগেনার ভোগেলসাঙ্গের (মারুকা নামে পরিচিত)[২০] সাথে পরিচিত হন[২১] এবং ১৯৩০ সালের ৬ ডিসেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনকালে নেরুদা প্রচুর কবিতা পড়তেন, বিভিন্ন কবিতার ধরনের সাথে পরিচিত হন এবং রেসিদেন্সিয়া এন লা তিয়েরা-এর প্রথম দুই খণ্ড লিখেন, যাতে অনেক পরাবাস্তব কবিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চিলিতে ফেরার পর নেরুদাকে বুয়েনোস আইরেসে কূটনৈতিক পদ দেওয়া হয়েছিল, এবং পরে স্পেনের বার্সেলোনায় পাঠানো হয়।[২২] পরবর্তীকালে তিনি মাদ্রিদে কনসুল হিসেবে গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রালের স্থলাভিষিক্ত হন। সেখানে তাকে ঘিরে একটি প্রাণোচ্ছল সাহিত্য মহল তৈরি হয় এবং লেখক রাফায়েল আলবের্তি, ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা ও পেরুভীয় কবি সেসার ভাইয়েহোর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়।[২২] তার একমাত্র কন্যা মালভা মারিনা (ত্রিনিদাদ) রেইয়েস ১৯৩৪ সালে মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটকাল থেকেই তিনি রোগব্যাধিতে জর্জরিত ছিলেন, বিশেষ করে হাইড্রোসেফালাসে আক্রান্ত ছিলেন।[২৩] তিনি ১৯৪৩ সালে মাত্র নয় বছরে মারা যান। মালভা তার এই ছোট্ট জীবনের বেশিরভাগ সময় নেদারল্যান্ডসে কাটান, কারণ নেরুদার তাকে উপেক্ষা ও পরিত্যাগ করায় তার মাতা তাদের ভরণপোষণের জন্য যে কোন ধরনের কাজ নিতে বাধ্য হয়।[২৪][২৫][২৬][২৭] এই সময়ে নেরুদা তার স্ত্রীর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকেন এবং তার চেয়ে ২০ বছরের বড় অভিজাত আর্জেন্টিনীয় শিল্পী দেলিয়া দেল কারিলের সাথে সম্পর্কে জড়ান।
স্পেন গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হলে নেরুদা প্রথমবারের মত রাজনৈতিক হয়ে পড়েন। স্পেনের গৃহযুদ্ধকালীন তার অভিজ্ঞতা ও এর ফলাফল তাকে একদিকে কেন্দ্রীভূত কাজ থেকে সরিয়ে সামষ্ঠিক কার্যাবলিতে মনোযোগী হতে বাধ্য করে। নেরুদা বাকি জীবনে অত্যন্ত উৎসাহী কমিউনিস্ট হয়ে পড়েন। তার সাহিত্যিক বন্ধুদের এবং দেল কারিলের বামপন্থী রাজনীতি এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে, কিন্তু সবচেয়ে প্রভাবক ছিল একনায়ক ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কোর প্রতি অনুগত দল কর্তৃক গার্সিয়া লোরকার মৃত্যুদণ্ড প্রদান।[২২] নেরুদা তার বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে স্পেনীয় প্রজাতন্ত্রের প্রতি তার সমর্থন জানান, বিশেষ করে এসপানা এন এল কোরাজোন (১৯৩৮) প্রকাশের মধ্য দিয়ে। তার রাজনৈতিক অনুসমর্থনের জন্য তিনি কনসুল পদ হারান।[২২] ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে তিনি স্পেনের যুদ্ধ নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মনোভাব সম্পর্কিত আলোচনার জন্য ভালেনসিয়া, বার্সেলোনা ও মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক লেখক কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অঁদ্রে মালরো, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ও স্টিফেন স্পেন্ডারসহ অসংখ্য লেখক উপস্থিত ছিলেন।[২৮]
ভোগেলসাঙ্গের সাথে নেরুদার বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং ১৯৪৩ সালে মেক্সিকোতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী স্পেনের বৈরিতা থেকে মুক্তি পেতে তার অসুস্থ কন্যাকে নিয়ে মন্টে কার্লোতে এবং এরপর নেদারল্যান্ডসে চলে যান। তাদের আর কখনো দেখা হয়নি।[২৯] স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের পর নেরুদা ফ্রান্সে দেলিয়া দেল কারিলের সাথে বসবাস করেন এবং ১৯৪৩ সালে তেতেকালায় তাকে বিয়ে করেন। তবে, চিলীয় কর্তৃপক্ষ তার নতুন এই বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়নি, কারণ ভোগেলসাঙ্গের সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছিল।[৩০]
১৯৩৮ সালে পেদ্রো আগিরে সের্দার রাষ্ট্রপতিত্বের নির্বাচনের পর নেরুদা প্যারিসে স্পেনীয় অভিবাসীদের জন্য বিশেষ কনস্যুল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেখানে তিনি অবহেলিত ক্যাম্পসমূহে ফরাসিদের দ্বারা আটককৃত ২,০০০ স্পেনীয় শরণার্থীকে উইনিপেগ নামক পুরনো একটি জাহাজে করে চিলিতে স্থানান্তরের দায়িত্ব পালন করেন।[৩১] নেরুদার বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে যে তিনি যারা প্রজাতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করেছিলেন তাদের বাদ দিয়ে শুধু সহকর্মী সাম্যবাদীদের দেশত্যাগের জন্য বেছে নিতেন।[৩২] জার্মান আক্রমণ ও দখলের সময় অনেক রিপাবলিকান এবং নৈরাজ্যবাদী নিহত হয়েছিল। অন্যরা মনে করেন, নেরুদা ২,০০০ শরণার্থীদের মধ্যে মাত্র কয়েকশজনকে বেছে নিয়েছিলেন, নির্বাসিত স্পেনীয় রিপাবলিকান সরকারের রাষ্ট্রপতি হুয়ান নেগরিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্পেনীয় শরণার্থীদের উচ্ছেদের জন্য পরিষেবা বাকিদের নির্বাচন করেছিল।
নেরুদা পরবর্তী কূটনৈতিক পদায়ন ছিল ১৯৪০ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মেক্সিকো সিটির কনস্যুল জেনারেল হিসেবে।[৩৩] সেখানে থাকাকালীন তিনি দেল কারিলকে বিয়ে করেন এবং জানতে পারেন যে তার আট বছর বয়সী কন্যা মালভা নাৎসি দখলকৃত নেদারল্যান্ডসে মারা গেছে।[৩৩]
১৯৪০ সালে লিওন ত্রোত্স্কির উপর গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এই প্রচেষ্টার সাথে জড়িত বলে অভিযুক্ত মেক্সিকান চিত্রশিল্পী দাভিদ আলফারো সিকেইরোসের জন্য চিলীয় ভিসার ব্যবস্থা করেন।[৩৪] নেরুদা পরবর্তীকালে বলেন তিনি মেক্সিকান রাষ্ট্রপতি মানুয়েল আবিলা কামাচোর অনুরোধে এই কাজ করেন। এর ফলে সে সময়ে জেলে আবদ্ধ সিকেইরোস মেক্সিকো থেকে চিলিতে যাওয়ার সুযোগ পান, এবং সেখানে তিনি নেরুদার গোপন নিবাসে অবস্থান করেন। নেরুদার সহায়তার ফলে সিকেইরোস চিয়ানে এক বছর একটি ম্যুরাল অঙ্কনে কাটিয়ে দেন। সিকেইরোসের সাথে নেরুদার সম্পর্ক সমালোচনার জন্ম দেয়, কিন্তু নেরুদা "চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক-সাহিত্যিক হয়রানি" হিসেবে একজন গুপ্তঘাতককে সাহায্যের অভিযোগটি খারিজ করে দেন।
১৯৪৩ সালে চিলিতে প্রত্যাবর্তনের পর নেরুদা পেরু ভ্রমণে যান এবং সেখানে তিনি মাচু পিচু দর্শন করেন।[৩৫] তার এই মাচু পিচু ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তাকে ১২ খণ্ডে রচিত কবিতার বই আলতুরাস দে মাচু পিচু লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়, যা তিনি ১৯৪৫ সালে সমাপ্ত করেন। এতে আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতার প্রতি তার গভীর আগ্রহের প্রকাশ দেখা যায়। তিনি এই বিষয়বস্তু কান্তো জেনারেল (১৯৫০) বইয়ে আরও প্রকাশ করেন। আলতুরাসে নেরুদা মাচু পিচুর অর্জনগুলো নিয়ে উদ্যাপন করেন এবং দাসত্বের নিন্দাও করেছিলেন। কান্তো ১২-এ তিনি বিভিন্ন শতাব্দীর মৃতদের পুনর্জন্মের আহ্বান জানান এবং তার মধ্য দিয়ে কথা বলতে বলেন। লাতিন কবি ও ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল লেখনীর অধ্যাপক মার্তিন এসপাদা এই সৃষ্টিকর্মকে শ্রেষ্ঠকর্ম বলে অভিহিত করে বলেন "এর চেয়ে সেরা কোন রাজনৈতিক কবিতা নেই"।
স্পেনের গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় অনুপ্রাণিত নেরুদা তার প্রজন্মের অনেক বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মত জোসেফ স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রসংশা করেন, আংশিক নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করতে এর ভূমিকা এবং আংশিক মার্ক্সবাদী নীতির আদর্শিক উপস্থাপনের জন্য।[৩৬] এই বিষয় তার কান্তো আ স্তালিনগ্রাদো (১৯৪২) ও নুয়েভো কান্তো দে আমোর আ স্তালিনগ্রাদো (১৯৪৩) কবিতায় প্রতিফলিত হয়। ১৯৫৩ সালে নেরুদা স্তালিন শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর স্তালিনের মৃত্যুর পর নেরুদা তাকে নিয়ে একটি শোকগাঁথা রচনা করেন এবং ফুলহেনসিও বাতিস্তার প্রসংশায় সালুদো আ বাতিস্তা কবিতা এবং পরবর্তীকালে ফিদেল কাস্ত্রোকে নিয়ে কবিতা লিখেন। তার ঐকান্তিক স্তালিনবাদের জন্য তার দীর্ঘকালের বন্ধু অক্তাবিও পাজের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পাজ বলেন, "নেরুদা অধিকতর স্তালিনবাদী হয়ে ওঠেন, অন্যদিকে আমি স্তালিনের প্রতি আরও কম আসক্ত হতে থাকি।"[৩৭] ১৯৩৯ সালের নাৎসি-সোভিয়েত রিবেনট্রপ-মলটোভ চুক্তির পর তাদের এই মতানৈক্য জোড়ালো হয় যখন তারা স্তালিনকে নিয়ে যুক্তিতর্কে লিপ্ত হন। পাজ তখনও নেরুদাকে "তার প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি" বলে গণ্য করতেন। আলেক্সান্দ্র্ সলজেনিৎসিনের এক প্রবন্ধে তিনি লিখেন যে যখন "নেরুদা ও অন্যান্য বিখ্যাত স্তালিনবাদী লেখক ও কবিদের কথা চিন্তা করি, ইনফার্নো-র কিছু পাতা পড়ার মত আমার লোম খাড়া হয়ে যেত।"[৩৮]
১৯৪৫ সালের ১৫ই জুলাই ব্রাজিলের সাও পাওলোর পাসেম্বু স্টেডিয়ামে নেরুদা ১০০,০০০ লোকের সামনে কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা লুইস কার্লোস প্রেস্তেসের সম্মানে এক বক্তৃতা প্রদান করেন।[৩৯] এছাড়া নেরুদা ভ্লাদিমির লেনিনকে "এই শতাব্দীর সেরা প্রভিতাবান ব্যক্তি" বলে অভিহিত করেন। ১৯৪৬ সালের ৫ই জুন এক বক্তৃতায় তিনি মৃত সোভিয়েত নেতা মিখাইল কালিনিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন তিনি নেরুদার কাছে "আদর্শ জীবনযাপনকারী ব্যক্তি", "সেরা ভবিষ্যৎ নির্মাতা" ও "লেনিন ও স্তালিনের কমরেড" ছিলেন।[৪০]
নেরুদা পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি অনুরাগের কারণে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "সে দিনগুলোতে স্তালিনকে আমাদের একজন বিজয়ী বলে মনে হত যিনি হিটলারের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিল।"[৩৬] ১৯৫৭ সালে চীনে ভ্রমণকালে নেরুদা লিখেন, "চীনা বিপ্লবের প্রক্রিয়া থেকে আমাকে যেটা বিচ্ছিন্ন করেছে তা মাও ৎসে-তুং নয়, বরং সেটা মাও ৎসে-তুংবাদ। তিনি মাও ৎসে-তুংবাদকে "সাম্যবাদী দেবতার ধর্মীয় আচারের পুনরাবৃত্তি" বলে উল্লেখ করেন।[৩৬] স্তালিনের প্রতি মোহমুক্তি ঘটলেও নেরুদা কমিউনিস্ট তত্ত্বের উপর তার যে বিশ্বাস তা হারাননি এবং এই দলের প্রতি অনুগত ছিলেন।
১৯৪৫ সালের ৪ঠা মার্চ নেরুদা আন্তাকামা মরুভূমির আন্তোফাগাস্তা ও তারাপাসার উত্তর প্রদেশের কমিউনিস্ট সেনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন।[৪১][৪২] সরকারিভাবে তিনি চার মাস পর কমিউনিস্ট দলে যোগ দেন।[৩৩] ১৯৪৬ সালে র্যাডিক্যাল পার্টির রাষ্ট্রপতি প্রার্থী গাব্রিয়েল গোন্সালেস ভিদেলা নেরুদাকে তার প্রচারণা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। বামপন্থী দলগুলোর জোট গোন্সালেস ভিদেলাকে সমর্থন দেয় এবং নেরুদাও ঐকান্তিকভাবে তার হয়ে কাজ করেন। দপ্তরে বসার পর ১৯৪৮ সালে গোন্সালেস ভিদেলা চিলিতে কমিউনিস্ট দল বন্ধের ডাক দেন এবং লে দে দেফেন্সা পের্মানেন্তে দে লা দেমোক্রাসিয়া (গণতন্ত্রের স্থায়ী প্রতিরক্ষা আইন) জারি করেন।
১৯৫৯ সালে নেরুদা ভেনেজুয়েলার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোকে প্রদত্ত সম্মাননার স্বাগত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে ও কান্টো আ বলিভার পাঠ করে শোনান। নেরুদা যা বলেছিলেন লুইস বায়েস তার সারাংশে লিখেন, "এই ব্যথিত ও জয়ী সময়ে আমেরিকার জনগণ যারা জীবিত আছেন, স্থান পরিবর্তিত আমার কবিতা, ফিদেল কাস্ত্রোকে নিয়ে, সকলেই বুঝতে পারবেন, কারণ স্বাধীনতার সংগ্রামে এই ব্যক্তির ভাগ্য আমাদের জনগণের ইতিহাসে মহানতার চেতনাকে সাহস জোগায়।"
১৯৬০-এর দশকের শেষভাগে আর্জেন্টিনীয় লেখক হোর্হে লুইস বোর্হেসকে পাবলো নেরুদা সম্পর্কে তার মতামত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। বোর্গেস বলেন, "আমি মনে করি তিনি খুব ভালো কবি, একজন খুবই ভালো কবি। আমি ব্যক্তি হিসেবে তার প্রশংসা করি না, আমি মনে করি তিনি খুবই খারাপ একজন মানুষ।"[৪৩] তিনি বলেন নেরুদা আর্জেন্টিনীয় রাষ্ট্রপতি হুয়ান পেরোনের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি কারণ তিনি তার খ্যাতির ঝুঁকি নিয়ে ভীত ছিলেন। এছাড়া তিনি বলেন, "আমি একজন আর্জেন্টিনীয় কবি ছিলেন, তিনি ছিলেন চিলীয় কবি, তিনি কমিউনিস্টদের পক্ষে ছিলেন, আমি তাদের বিপক্ষে ছিলাম। তাই আমি মনে করি তিনি খুবই চতুরতার সাথে সাক্ষাৎ এড়িয়ে গিয়েছেন কারণ তা আমাদের দুজনের জন্যই খুবই অস্বস্তিকর হত।"[৪৪]
নেরুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। বন্ধুরা তাঁকে ভালপারাইসোর বন্ধর শহরে একটি ঘরের ভিতর লুকিয়ে রাখেন। সেখান থেকে নেরুদা পাহাড়ের উপর দিয়ে মাইহু হ্রদ অতিক্রম করে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। বছর কয়েক পর নেরুদা চিলির সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি সালভাদোর আইয়েন্দের সাহচর্যে আসেন। নেরুদা নোবেল পুরস্কার গ্রহণের পর যখন তিনি চিলিতে ফেরত আসেন, তখন আলেন্দে তাঁকে এস্তাদিও নাসিওনালে সত্তর হাজার লোকের সম্মুখে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানান। অগাস্তো পিনোচের শাসনামলে নেরুদা ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাঁর মনে হয়েছিল কোনো এক ডাক্তার পিনোচের আদেশে তাঁকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছেন। নেরুদা ১৯৭৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর তাঁর নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকে মনে করেন, তাঁকে স্পষ্টত হত্যা করা হয়েছে। কিংবদন্তি নেরুদার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পিনোচেট তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া জনসমক্ষে করার অনুমতি দেননি। কিন্তু হাজারও শোকার্ত চিলিয়রা তাঁর আদেশ অমান্য করে পথে ভিড় জমান। নেরুদাকে প্রায়ই চিলির জাতীয় কবি হিসেবে ধরা হয় এবং তাঁর সাহিত্যকর্মগুলি বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। কলম্বিয়ার ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা তাঁকে "বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার মহান কবি" হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
১৯৭০ সালে নেরুদা চিলির রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত ছিলেন, কিন্তু তিনি সালভাদোর আইয়েন্দেকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। আইয়েন্দে পরবর্তীকালে নির্বাচনে জয় লাভ করেন এবং ১৯৭০ সাএর চিলির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অভিষিক্ত হন।[৪৫][৪৬] এর কিছুদিন পর আইয়েন্দে নেরুদাকে ফ্রান্সে চিলির রাষ্ট্রদূত করেন, যার মেয়াদকাল ছিল ১৯৭০ থেকে ১৯৭২। এটি তার সর্বশেষ কূটনৈতিক পদায়ন। প্যারিসে থাকাকালীন নেরুদা চিলির বহিঃঋণ নিয়ে ঐকমত্যে আসার জন্য পুনরায় আলোচনা করায় সাহায্য করেন। সে সময়ে ইউরোপীয় ও মার্কিন ব্যাংকগুলোতে চিলির বিলিয়ন ডলার অর্থ ঋণ ছিল। কিন্তু প্যারিসে যাওয়ার কয়েকমাস পর তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে।[৪৫] নেরুদা ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে আড়াই বছর পর চিলিতে ফিরে আসেন।
পিনোচের শাসনামলে নেরুদা ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাঁর মনে হয়েছিল কোনো এক ডাক্তার পিনোচেটের আদেশে তাঁকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছেন। নেরুদা ১৯৭৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর তাঁর নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৪৭][৪৮][৪৯]
চিলিতে নেরুদার তিনটি বাড়ি ছিল। বর্তমানে সবকয়টি জাদুঘর হিসেবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত; সেগুলো হল সান্তিয়াগোতে অবস্থিত লা চাসকোনা, ভালপারাইসোয় অবস্থিত লা সেবাস্তিয়ানা এবং ইসলা নেগ্রায় অবস্থিত কাসা দে ইসলা নেগ্রা, যেখানে তিনি ও মাটিল্ডে উরুটিয়া সমাহিত।
ওয়াশিংটন, ডি.সি.র অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস ভবনের চত্বরে নেরুদার একটি আবক্ষ মূর্তি অবস্থিত।[৫০]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Tarn14
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Tarn15
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Tarn22
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি