কুইঁব্রা | |
---|---|
পৌরসভা | |
ঘড়ির কাঁটার দিকে: মোনদেগু নদী থেকে তোলা কুইঁব্রা নগরীর দৃশ্য; কুইঁব্রা বিশ্ববিদ্যালয়; কুইঁব্রার নদী-সন্নিহিত এলাকা; সান্তা ক্রুশ মঠ ও গির্জা; কুইঁব্রা বাইশা (নগরকেন্দ্র) | |
স্থানাঙ্ক: ৪০°১২′৪০″ উত্তর ৮°২৫′৪৫″ পশ্চিম / ৪০.২১১১১° উত্তর ৮.৪২৯১৭° পশ্চিম | |
দেশ | পর্তুগাল |
অঞ্চল | সেন্ত্রু |
আন্তঃপৌরসভা সম্প্রদায় | Região de Coimbra |
জেলা | Coimbra |
যাজকীয় বিভাগ | 18 (list) |
সরকার | |
• সভাপতি | Manuel Machado (PS) |
আয়তন | |
• মোট | ৩১৯.৪০ বর্গকিমি (১২৩.৩২ বর্গমাইল) |
সর্বোচ্চ উচ্চতা | ৪৯৯ মিটার (১,৬৩৭ ফুট) |
সর্বনিন্ম উচ্চতা | ৯ মিটার (৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (2021) | |
• মোট | ১,৪০,৮১৩ |
• জনঘনত্ব | ৪৪০/বর্গকিমি (১,১০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | WET (ইউটিসি±00:00) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | WEST (ইউটিসি+01:00) |
ডাক সঙ্কেত | 3000 |
আঞ্চলিক সঙ্কেত | 239 |
রক্ষক | Rainha Santa Isabel |
ওয়েবসাইট | www |
কুইঁব্রা (পর্তুগিজ: Coimbra; আ-ধ্ব-ব: ; ⓘ) দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র পর্তুগালের একটি নগরী ও পৌরসভা (কোনসেলিও)। নগরীটি মোনদেগু নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী কুইঁব্রা নগরীর জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪৩ হাজারের কিছু বেশি।[১] নগরীটির আয়তন ৩১৯ বর্গকিলোমিটার।[২] প্রশাসনিকভাবে এটি পর্তুগালের সেন্ত্রু প্রশাসনিক অঞ্চলের কুইঁব্রা জেলার বৃহত্তম নগরী। লিসবন, পোর্তু ও ব্রাগা-র পরে কুইঁব্রা পর্তুগালের চতুর্থ বৃহত্তম নগরী।
৪র্থ শতকে খোদাই করা লিপি থেকে জানা যায় যে বর্তমান কুইঁব্রা নগরীটি প্রাচীন রোমে আয়েমিনিউম নামে পরিচিত ছিল। এখান থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কোনদেইশা নগরীটি ছিল প্রাচীন কোনিমব্রিগা বা কোনিমব্রিকা নগরী। উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত মুসলমান আরব মুর জাতির লোকেরা প্রায় এক শতাব্দী ধরে আয়েমিনিউম নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। ৮৭৮ সালে আস্তুরিয়াস ও লেওনের রাজা ৩য় আলফোনসো নগরীটি পুনরায় করায়ত্ত করেন এবং এখানে উত্তরের গালিসীয় জাতির লোকেরা বসতি স্থাপন করে। কোনিমব্রিগার "সী"-টি যখন আয়েমিনিউম নগরীতে স্থানান্তর করা হয়, তখন বিশপ নগরীর নাম পরিবর্তন করে কুইঁব্রা রাখেন। ১০৬৪ সালে কাস্তিলিয়ার রাজা ১ম ফের্দিনান্দ কুইঁব্রা বিজয় করেন। এরপর প্রায় একশত বছর ধরে এটি মুরদের কাছ থেকে পর্তুগাল পুনর্বিজয়ের একটি ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে।
১১৩৯ থেকে ১২৬০ পর্যন্ত কুইঁব্রা পর্তুগালের রাজধানী ছিল। ১ম ও ২য় সাঞ্চু,, ২য় ও ৩য় আফোনসু, ১ম পেদ্রু এবং ১ম ফের্দিনান্দু—এই ছয়জন মধ্যযুগীয় রাজা এই নগরীতেই জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া ১৬শ শতকের কবি ফ্রান্সিসকু দি সাঁ দি মিরান্দা-ও এখানে জন্ম নেন। ১২৯০ সালে লিসবনে প্রতিষ্ঠিত পর্তুগালের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ১৫৩৭ সালে কুইঁব্রাতে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় উনিভের্সিদাদি দি কুইঁব্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গির্জাটিতে ১৫১৭-১৫২২ সালে নির্মিত একটি উৎকৃষ্ট খোদাইকৃত প্রবেশদ্বার আছে, আরও আছে কারুকার্যময় বারোক গ্রন্থাগার (১৭১৬-১৭২৩), যেখানে প্রায় ১০ লক্ষ গ্রন্থ ও ৩ হাজার পাণ্ডুলিপির সংগ্রহ আছে। এখানে ১৫৭২ সালে প্রকাশিত লুইস দি কামোইঁশের লেখা মহাকাব্য উজ লুজিয়াদাশ ("পর্তুগিজ জাতি") -এর প্রথম সংস্করণটি দেখতে পাওয়া যায়। ১৬শ শতকের শুরুর দিকে নগরীটি বহুস্বরিক (Polyphonic) সঙ্গীতের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং পর্তুগিজেরা সঙ্গীতের এই ধারাটি সুদূর আফ্রিকার ইথিওপিয়া ও কঙ্গোতে নিয়ে গিয়েছিল।
কুইঁব্রার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে রোমান-সদৃশ শৈলীতে নির্মিত প্রাচীন মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল (১১৭০); সাঁউ সালভাদোর গির্জা (১২শ শতক); ১৫৯৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু করা নতুন মহাগির্জা বা ক্যাথেড্রাল, পুরাতন এপিস্কোপাল প্রাসাদের মধ্যে স্থাপিত মাচাদো দি কাস্ত্রু জাদুঘর, যা ১৫৯২ সালে পুনরুদ্ধার করা হয়। সান্তা ক্রুশ গির্জা, রাজা ১ম আফোনসু-র আমলে নির্মিত হয় এবং ১৫২০ সালে পুনর্নির্মিত হয়। রোমান আমলের ভিত্তির উপরে ১৫৬৮-৭০ সালে নির্মিত জলবাহী নালিকা সাঁউ সেবাস্তিয়াঁউ। আর ১২শ শতকে নির্মিত সেলাস মঠ, যা রাজা ১ম সাঞ্চুর কন্যা বেয়াতা সাঞ্চু নির্মাণ করান। কুইঁব্রার ঐতিহাসিক ভবনগুলিকে ২০১৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে।[৩]
মোনদেগু নদীর উত্তর তীরটি একটি প্রস্তর সেতুর মাধ্যমে কুইঁব্রার সাথে সংযুক্ত। এখানে কুইঁব্রার উপশহর সান্তা ক্লারা অবস্থিত। এখানে ১৩শ শতকে নির্মিত পুরাতন এবং ১৭শ শতকে নির্মিত নতুন সান্তা ক্লারা মঠ দুইটি অবস্থিত। এখানে রাজা ১ম পেদ্রুর মিস্ট্রেস ইনেস দি কাস্ত্রুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
কুইঁব্রা নগরীর প্রধান প্রধান শিল্পের মধ্যে আছে মৃৎশিল্পজাত দ্রব্য, বস্ত্র, বিয়ার মদ, দ্রাক্ষাসুরা, কাগজ ও চামড়ার দ্রব্য প্রস্তুতের কারখানা। ১৯শ শতকে এখানে একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কুইঁব্রা নগরীটি রাজধানী লিসবন ও উত্তরে পোর্তু নগরীকে সংযুক্তকারী বিদ্যুতায়িত রেলপথ ও মহাসড়কে উপরে অবস্থিত। আরেকটি মহাসড়ক ও রেলপথ এখান থেকে পূর্ব দিকে গুয়ার্দা হয়ে স্পেন পর্যন্ত চলে গেছে।
কুইঁব্রাকে বেষ্টনকারী অঞ্চলের মানুষদের মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বা পেশাগত বৃত্তি হল কৃষিকাজ ও মৎস্যশিকার। এখানে খাদ্যশস্য, জলপাই, ধান ও ফলের চাষ হয়। খনিজ তেলের কিছু ক্ষুদ্র মজুদ আবিষ্কৃত হলেও এগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে নিষ্কাশন করা হয়নি। মোনদেগু নদী ও তার উপনদী আলভা-র উপরে বাঁধগুলি জলবিদ্যুতের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।