আরিথা ফ্র্যাঙ্কলিন | |
---|---|
ইংরেজি: Aretha Franklin | |
জন্ম | আরিথা লুইস ফ্র্যাঙ্কলিন ২৫ মার্চ ১৯৪২ |
মৃত্যু | ১৬ আগস্ট ২০১৮ | (বয়স ৭৬)
সমাধি | উডলন সেমেটারি, ডেট্রয়েট |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৫৪-২০১৭ |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সন্তান | ৪ |
পিতা-মাতা | |
আত্মীয় |
|
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
সঙ্গীত কর্মজীবন | |
উদ্ভব | ডেট্রয়েট, মিশিগান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ধরন | |
বাদ্যযন্ত্র | |
লেবেল | |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
স্বাক্ষর | |
আরিথা ফ্র্যাঙ্কলিন (/əˈriːθə/ ə-REE-thə; ২৫ মার্চ ১৯৪২ - ১৬ আগস্ট ২০১৮) একজন মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও পিয়ানোবাদক ছিলেন।[২] "সোলের রানী" হিসেবে আখ্যায়িত ফ্র্যাঙ্কলিনকে রোলিং স্টোন দুইবার সর্বকালের সেরা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।[৩][৪] বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঙ্কলিনের ৭৫ মিলিয়নের বেশি রেকর্ড বিক্রি হয়েছে, যার ফলে তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ বিক্রীত সঙ্গীতশিল্পী।[৫]
শৈশবে ফ্র্যাঙ্কলিনকে মিশিগানের ডেট্রয়েটের নিউ বেথেল ব্যাপ্টিস্ট চার্চে গসপেল গাইতে দেখা যেত, সেখানে তার পিতা সি. এল. ফ্র্যাঙ্কলিন মিনিস্টার ছিলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি কলাম্বিয়া রেকর্ডসের রেকর্ডিং শিল্পী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন। তার কর্মজীবন খুব দ্রুত বিস্তার লাভ না করলেও তিনি ১৯৬৬ সালে আটলান্টিক রেকর্ডসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর সমাদৃত হন ও ব্যবসা সফলতা পান। তিনি এই রেকর্ড কোম্পানির সাথে ঝামেলায় জড়ানোর পূর্বে আই নেভার লাভড আ ম্যান দ্য ওয়ে আই লাভ ইউ (১৯৬৭), লেডি সোল (১৯৬৮), স্প্রিরিট ইন দ্য ডার্ক (১৯৭০), ইয়াং, গিফটেড অ্যান্ড ব্ল্যাক (১৯৭২), অ্যামেজিং গ্রেস (১৯৭২), ও স্পার্কল (১৯৭৬)-এর মত সমাদৃত অ্যালবাম রেকর্ড করেন। ১৯৭৯ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন আটলান্টিক ত্যাগ করেন এবং আরিস্টা রেকর্ডসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। জাম্প টু ইট (১৯৮২), হুজ জুমিন' হু? (১৯৮৫), আরিথা (১৯৮৬) ও আ রোজ ইজ স্টিল আ রোজ (১৯৯৮) অ্যালবাম দিয়ে তার সফলতা চলতে থাকে।
ফ্র্যাঙ্কলিন ইউএস বিলবোর্ড চার্টে ১১২টি তালিকাভুক্ত একক গান রেকর্ড করেন, তন্মধ্যে রয়েছে ৭৩টি হট ১০০ গান, ১৭টি শীর্ষ ১০ পপ একক গান, ১০০ আরঅ্যান্ডবি গান, ২০টি ১ নং আরঅ্যান্ডবি একক গান। তার সবচেয়ে সফল গানসমূহের মধ্যে রয়েছে "আই নেভার লাভড আ ম্যান (দ্য ওয়ে আই লাভ ইউ)", "রেসপেক্ট", "(ইউ মেক মি ফিল লাইক) আ ন্যাচারাল ওম্যান", "চেইন অব ফুলস", "থিংক", "আই সে আ লিটল প্রেয়ার", "এইন্ট নো ওয়ে", "কল মি", "ডোন্ট প্লে দ্যাট সং (ইউ লাইড)", "স্প্যানিশ হারলেম", "রক স্টেডি", "ডে ড্রিমিং", "আনটিল ইউ কাম ব্যাক টু মি (দ্যাট'স হোয়াট আ'ম গনা ডু)", "সামথিং হি ক্যান ফিল", "জাম্প টু ইট", "ফ্রিওয়ে অব লাভ", "হুজ জুমিন' হো", "আই নিউ ইউ অয়েআর ওয়েটিং (ফর মি)" (জর্জ মাইকেলের সাথে দ্বৈত গান) ও "আ রোজ ইজ স্টিল আ রোজ"।
ফ্র্যাঙ্কলিন তার কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি ৪৪টি গ্র্যামি পুরস্কারের মনোনয়ন থেকে ১৮টি পুরস্কার অর্জন করেছেন,[৬][৭] তন্মধ্যে প্রথম আটটি শ্রেষ্ঠ মহিলা আরঅ্যান্ডবি ভোকাল পরিবেশনার জন্য (১৯৬৮-১৯৭৫), একটি গ্র্যামি জীবন্ত কিংবদন্তি সম্মাননা ও আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। তাকে ন্যাশনাল মেডেল অব আর্টস ও প্রেসিডেনশল মেডেল অব ফ্রিডমে ভূষিত করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালে প্রথম মহিলা শিল্পী হিসেবে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়া ২০০৫ সালে ইউকে মিউজিক হল অব ফেম, ২০১২ সালে গসপেল মিউজিক হল অব ফেম,[৮] ও ২০২০ সালে মরণোত্তর ন্যাশনাল উইমেন্স হল অব ফেমে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।[৯] ২০১৯ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জুরি "পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে মার্কিন সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে তার অমোচনীয় অবদানের জন্য" তাকে মরণোত্তর বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে।
আরিথা লুইস ফ্র্যাঙ্কলিন ১৯৪২ সালের ২৫শে মার্চ টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেম্ফিস শহরের ৪০৬ লুসি অ্যাভিনিউয়ে তার নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা বারবারা সিগার্স ও পিতা ক্লেরেন্স লাভন "সি.এল." ফ্র্যাঙ্কলিন। তার পিতা ব্যাপ্তিষ্ম মিনিস্টার ও সার্কিট যাজক ছিলেন। তার মাতা পিয়ানোবাদক ও কণ্ঠশিল্পী ছিলেন।[১১] তার পিতামাতার পূর্বের সম্পর্কের সন্তান ছিল এবং এই দম্পতির চার সন্তান ছিল। আরিথার বয়স যখন দুই, তখন তাদের পরিবার নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফালো শহরে চলে যায়।[১২] আরিথার বয়স যখন পাঁচ, তখন সি. এল. ফ্র্যাঙ্কলিন স্থায়ীভাবে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে তিনি নিউ বেথেল ব্যাপ্টিস্ট চার্চে যাজকের পদে যোগ দেন।[১৩]
ফ্র্যাঙ্কলিনের পরকীয়ার জন্য এই দম্পতির বিবাহ স্থায়ী হয়নি, যার ফলে ১৯৪৮ সালে তারা আলাদা হয়ে যান।[১৪] এই সময় বারবারা আরিথার সৎ ভাই ভনকে নিয়ে বাফালোতে ফিরে যান।[১৫] আলাদা হওয়ার পর আরিথা গ্রীষ্মকালে তার মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে বাফালো যেতেন এবং বারবারা তার সন্তানদের সাথে সাক্ষাৎ করতে ডেট্রয়েটে আসতেন।[১৬][১৫] ১৯৫২ সালের ৭ই মার্চ আরিথার ১০ম জন্মদিনের পূর্বে হার্ট অ্যাটাকে তার মায়ের মৃত্যু হয়।[১৭] আরিথার পিতামহী রেচল ও মাহেলিয়া জ্যাকসন ফ্র্যাঙ্কলিনের বাড়িতে তাদের দেখাশোনা করতেন।[১৮] এই সময়ে আরিথা পিয়ানো বাজানো শিখেন।[১৯] তিনি ডেট্রয়েটের সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে নর্থার্ন হাই স্কুলে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নের পর দ্বিতীয় বর্ষে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েন।[২০]
রিচি আন্টারবার্জারের মতে ফ্র্যাঙ্কলিন "সোল সঙ্গীতের এবং সর্বোপরি মার্কিন পপ সঙ্গীতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি অন্য যে কোন পরিবেশকের চেয়ে বেশি সোল সঙ্গীতের সার-সংগ্রহ করেছেন।"[১] কণ্ঠের নমনীয়তা, ব্যাখ্যামূলক বুদ্ধিমত্তা, দক্ষ পিয়ানো-বাজানো, তার শ্রবণ ও তার অভিজ্ঞতার জন্য তাকে প্রায়ই সেরা সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে অভিহিত করা হয়।[২১] ফ্র্যাঙ্কলিনের কণ্ঠকে "জোরালো মেৎজো-সোপ্রানো কণ্ঠ" হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি অন্যান্য শিল্পীদের জনপ্রিয় গানসমূহের সঙ্গীতায়োজন ও উপস্থাপনার জন্য প্রশংসিত।[২২] ডেভিড রেমনিকের মতে তার সাঙ্গীতিক বুদ্ধিমত্তা, তালের সাথে তার গায়কীর ধরন, একটি শব্দ বা শব্দাংশ থেকে সুর বিচ্ছ্যুরিত করা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।[২৩] ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত ১৪ বছর বয়সী ফ্র্যাঙ্কলিনের প্রথম অ্যালবাম সংস অব ফেইথ-এ তার কণ্ঠের বর্ণনা দিতে গিয়ে জেরি ওয়েক্সলার বলেন, "এটি কোন বাচ্চার কণ্ঠ নয় বরং কোন পরমানন্দদায়ক পুরোহিতের কণ্ঠ।"[২৪] সমালোচক র্যান্ডি লুইস পিয়ানোবাদক হিসেবে তার দক্ষতার মূল্যায়ন করে বলেন তা "ঐন্দ্রজালিক" ও "প্রেরণাদায়ক"। এলটন জন, কিথ রিচার্ডস, ক্যারোল কিং ও ক্লাইভ ডেভিসের মত সঙ্গীতজ্ঞ ও পেশাদাররা তার পিয়ানো বাদনের ভক্ত ছিলেন।[২৫]